নয়াদিল্লি: তসলিমা নাসরিন বিতর্কিত লেখক হিসেবেই পরিচিত। তাঁর লেখার জন্য তাঁকে বিতর্কিত লেখক বলা হয়। তবে ‘বিতর্কিত’ এর প্রতিক্রিয়া দিলেন।
ফেসবুকে তসলিমা নাসরিন লিখেছেন:
“অনেকে আমাকে বলে ”বিতর্কিত” লেখিকা। বিতর্কিত শব্দটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখি। প্রায় সকলেই ভাবে, বিতর্কিত, তার মানে সে কোনও গর্হিত কাজ করেছে, অন্যায় করেছে, দোষ করেছে, মোদ্দা কথা মানুষটা ভালো নয়, সে কারণেই বিতর্কিত। কেউ বিতর্কিত বলে নাক সিঁটকায়, কেউ নিরাপদ দূরত্ব বেছে নেয়।
এই সমাজে কেন আমি বিতর্কিত হিসেবে পরিচিত? কোনও সভ্য সমাজে তো আমাকে বিতর্কিত বলা হয় না! বিতর্কিত বলা হয় না, কারণ আমি ধর্ম নিয়ে, নারীর অধিকার নিয়ে, মানবাধিকার নিয়ে যা বলি, রাষ্ট্র এবং সমাজ নিয়ে, শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে যা বলি, তা সভ্য সমাজের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য , সঠিক, যুক্তিপূর্ণ বলে মনে হয়।
আমার মতের সঙ্গে সকলে একমত হয়, কেউ অমত করে না, বিতর্ক করে না।
কোন সমাজে আমার চিন্তা ভাবনা নিয়ে হৈ চৈ হয়, তান্ডব হয়, রায়ট হয়, ফতোয়া হয়, মিছিল হয়, বিতর্ক হয়, ফাঁসির দাবি ওঠে, মৃত্যুর হুমকি আসে, নিন্দা আর ঘৃণার ঝড় ওঠে? অসভ্য সমাজে। কারা করে বিতর্ক?
অশিক্ষিত লোকেরা। অসভ্য সমাজের নারীবিরোধী প্রথা, কুৎসিত পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ, শ্রেণীবাদ ইত্যাদিতে কষে ঘা না দিলে কোনও লেখককে বা শিল্পীকে আমি প্রগতিশীল বলি না।
যাঁরা এই অসভ্য সমাজে সত্যিকার প্রগতিশীল, তাঁরা বিতর্কিত হবেনই। যাঁরা বিতর্কিত নন, তাঁরা ভয়ংকর, কারণ তাঁরা স্টেটাস ক্যুয়োতে বিশ্বাস করেন, অসভ্য সমাজের অসভ্যতার সমালোচনা তাঁরা করেন না, অসভ্য সমাজকে সভ্য করতে তাঁরা চান না।
অসভ্য সমাজে ‘বিতর্কিত’ যাঁরা, তাঁরাই নমস্য”।