‘IF ALL MEN ARE BORN FREE, HOW IS IT THAT ALL WOMEN ARE BORN SLAVES?’
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত মানবতাবাদী, নারীবাদী, মৌলবাদ বিরোধি লেখিকা তসলিমা নাসরিনের আজ (২৫ আগস্ট) ৫৮তম জন্মবার্ষিকী।
ভারতে তাঁর নয়া দিল্লির বাড়িতে ইতিমধ্যেই লেখিকার জন্মদিন পালনের জন্যে তাঁর প্রিয় কলকাতা থেকে বন্ধু-বান্ধবদের আগমণ ঘটেছে। নাসরিন অত্যন্ত খোশমেজাজে রয়েছেন। তবে আজ বলেই নয়, দীর্ঘ সংগ্রামের পরও তাঁকে কেউ কোনদিন ক্লান্ত হতে দেখেননি। কারণ যাঁর জীবন গড়েই উঠেছে সংগ্রামের জন্যে, তাঁর আবার ক্লান্তি কিসের? ক্লান্তি, অবসাদ তো তাঁদের আসে যাঁরা প্রতিনিয়ত বাস্তব পরিস্থিতি থেকে সরে গিয়ে সম্মান নষ্ট হবার ভয়ে গা বাঁচিয়ে চলেন!
রাষ্ট্রকে ভালবাসা নাসরিন ২৫ বছর হয়ে গেল বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত। কিন্তু বর্তমান সময়ও কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝেই স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েন মাতৃভূমির জন্যে। তবে একটি মাত্র জীবনে মানুষের যে দেশেই হোক না কেন, কাটিয়ে দিতে পারেন। সে জন্যে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই তসলিমার। জন্মভূমি তো তাঁকে টানে অবশ্যই, সংবাদ মাধ্যমের এক- একটি সাক্ষাৎকারে ময়মনসিংহের কথা জিজ্ঞেস করলে চোখ দুটো সঙ্গে সঙ্গে নস্টালজিক হয়ে পড়ে। বলে চলেন একটানা বাড়ির সেই নারকেল গাছের কথা।
তিনি কোনদিন রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ শেষ করে ফিরে যাবেন কিনা, সেটা মূল কথা নয়। তিনি সাক্ষাৎকারে বারংবার একটা কথা উল্লেখ করেন যে, নিজের অধিকারের জন্যে আজীবন তিনি লড়ে যাবেন।
‘আমি কি পেলাম না পেলাম, সেটা বড় কথা নয়। হয়তো লাভ না করার পাল্লাটাই ভারি। কিন্তু আমার যা ন্যায্য অধিকার তা থেকে আমি কেন বঞ্চিত হবো?’ তসলিমা আসলে সেদিকেই চোখ ফেরাতে চাইছেন।
লেখিকা তসলিমা নাসরিনের লেখা আমাদের প্রশ্ন করতে শেখায়। শেখায় সমাজে পরিবারে কেবল পুত্র সন্তানই কেন বংশের প্রদীপ হবে? নারী সেখানে কোন দোষে দোষী?
‘আমরা কি রাস্তার ক্ষুধার্ত পশুগুলোকে শুধুমাত্র তারা ক্ষুধার্ত, এই মানবতাবোধে খাবার মুখে তুলে দিতে পারিনা? আমাদের কেন ভাবতে হবে, শনিবার কিংবা মঙ্গলবারে দিলে আমাদের পুণ্য হবে, তাই এই বারেই দেব!’
এ কথার থেকে এটাই প্রমাণিত হয় না যে, আমরা উপকার তো করছি কিন্তু প্রকারান্তরে নিজের লাভের কথা ভেবে?
তসলিমার তীক্ষ্ণ কলম আমাদের এগুলো ভাবতে শেখায়। শেখায় আত্মবিশ্লেষণ।
আমরা যদি ভেবে থাকি, লেখিকা নাসরিন কেবল পুরুষের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন কথা সময়-অসময়ে বলেছেন, তাহলে ভুল হবে। প্রকৃতার্থে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন সবসময় যে, একজন নারী যিনি সংসার সামলে , সন্তান সামলে চাকুরিও করছেন। দশদিকে যে নারীর নজর রয়েছে, সে স্থানে তাঁদের কেন এত নির্যাতন ভোগ করতে হবে?
কোথাও তো লেখা নেই, সন্তানকে কোলেপিঠে মানুষ করা, রান্না করা, ঘরের কাজ করা কেবল মেয়েদের কাজ! অপরদিকে অফিস করা, বাজার-হাট করা, ঘুড়ি ওড়ানো কেবল পুরুষের কাজ?
চাইলে সকলেই সবকিছু করতেই পারেন। বাধা কোথাও? লেখিকা সমাজের উদ্দেশ্যে, কট্টরপন্থীদের উদ্দেশ্যে সে প্রশ্নই তুলেছেন।
কন্যাভ্রুণ হত্যা এপার-ওপার বাংলায় এখনো সঙ্গোপনে সংঘটিত হয়ে চলেছে। একবিংশ শতাব্দীতেও স্ত্রীকে নেড়া করে চলছে অকথ্য অত্যাচার, চলছে গোপনে গোপনে বাল্যবিবাহ, ধর্ষণ! এগুলোর জবাব কে দেবে?
নারীর অধিকার সম্বন্ধে সচেতনতার বার্তা শোনা গেছে বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলামের কণ্ঠে, শোনা গেছে বিশ্বকবির কণ্ঠে।
তবে বলব, তসলিমা তুমি হেরে যাওনি। কারণ তোমার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে মেয়েরা এখন আর জগৎ সংসারে সুযোগ লাভের অপেক্ষা রাখে না, সুযোগ তারা নিজেরাই সৃষ্টি করে। স্বাধীনতা তাকে কেউ দেবে, এরপর তারা ভোগ করবে, এ আশা রাখে না। নাসরিন তোমার অনুপ্রেরণায়, তোমারই মতো ‘নারী আজ দেবীও নয়, সামান্যা নারীও নয়। সে কঠিন ব্রতে ব্রতী হয়ে পুরুষের পাশে কাঁধে কাধ মিলিয়ে চলেছে সামনের দিকে।’
শেষে তোমার ভাষাতেই বলি তসলিমাঃ
তোমার জন্যে অপেক্ষা করছে মধুপুর নেত্রকোনা
অপেক্ষা করছে জয়দেবপুরের চৌরাস্তা
তুমি ফিরবে।