“কেউ মদকে খায়, মদ কাউকে খায়। মদের দোকান খুলে দেওয়ার পর মদ কেনার জন্য নাছোড়বান্দা মানুষের লম্বা লাইন দেখে মনে হলো এদের মদ ছাড়া চলে না।”
মদের দোকান খোলার সঙ্গে সঙ্গে ভারতে রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে গেছে কোভিড-১৯ এ আক্রান্তে সংখ্যা। ৪৯ হাজার অতিক্রম করে গেছে ২৪ ঘন্টায়।
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গে মাত্র ১০ ঘণ্টাতেই ১০০ কোটি টাকার মদ বিক্রি হয়েছে বাংলায়। কয়েক ঘণ্টাতেই ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠল মদের দৌলতে। সোমবার বিকেল ৩টে থেকে মদ বিক্রি শুরু হয়। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা হয়েছে মদের দোকান।
মদের দোকানগুলোয় কী মানা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব? যারা মদ খাওয়ার জন্যে লাইন দিয়েছে, তাঁদের সে মুহূর্তে দেখে মনে হচ্ছিল শক্তিশালী দেশগুলোর পাশাপাশি ভারতেও যে ক্রমে ভয়ংকর একটা রূপ নিতে চলেছে কোভিড-১৯, সেদিকে কোনপ্রকার নজর নেই তাঁদের!
সম্প্রতি রিপোর্টে বেরিয়েছে, এই লকডাউনে ভয়ংকর পরিমাণে বেড়েছে পারিবারিক অশান্তি। বৃদ্ধি পাচ্ছে নারী নির্যাতনের হার! পুরুষ পুরুষ হয়েই থাকছে, মানুষ হচ্ছে না! পুরুষতান্ত্রিকতা তাঁদের মজ্জায়-মজ্জায়!
এদিকে, ভারতের রাজধানী দিল্লিতেও মদের দোকান খোলায় মাতাল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন নাগরিকদের পোস্টে ভরে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়া!
এক সতর্ক নাগরিক ফেসবুকে ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, “মদের নেশায় চরিত্র নষ্ট হয় না। সার্বজনীনভাবে তা প্রকাশিত হয়েছে। অতএব এই সম্মানীয় তরল পদার্থকে যথার্থ বলে গণ্য করবেন।”
বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন প্রবল বিরোধিতা করেছেন। লিখেছেনঃ
“কেউ মদ খায় ভালো লাগার জন্য। কেউ খায় মাতাল হওয়ার জন্য। কারো প্রতিদিন মদ না খেলে চলে, কারো আবার চলে না। কেউ মদকে খায়, মদ কাউকে খায়। মদের দোকান খুলে দেওয়ার পর মদ কেনার জন্য নাছোড়বান্দা মানুষের লম্বা লাইন দেখে মনে হলো এদের মদ ছাড়া চলে না। বৃষ্টিতে চুপসে গেছে, কিন্তু লাইন থেকে নড়ছে না । সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং ভেংগে ভয়ংকর অবস্থা। জীবনের চেয়ে মদ বেশি জরুরি? মনে হচ্ছিল দুর্ভিক্ষ লেগেছে, ক্ষুধার্ত মানুষকে ভাত রুটি দেওয়া হচ্ছে লংগরখানায়। তা তো নয়, মদে আসক্ত মানুষ বেশি দাম দিয়ে মদ কিনছে। সরকারের থলেয় টাকা পড়েছে। কিন্তু এদের অনেকে যদি আজ করোনায় মারা যায়! এর দায় কে নেবে? আমি তো ভেবেছিলাম মদের নেশা যাদের, তারা লকডাউনের সময়টা ঘরে মদ না খেয়ে থাকছে, ফ্রিতে রিহ্যাব হয়ে যাচ্ছে, একদিকে ভালো, নেশা ধীরে ধীরে কেটে যাবে। মানুষগুলো ক্লিন এন্ড সোবার হয়ে বেরোবে। কোথায় কী! লকডাউনে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স প্রচুর বেড়েছে। এখন তো মদ পেটে পড়বে, আর লাগামছাড়া ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স শুরু হবে। মুশকিল হলো, আত্মীয় বন্ধু পড়শি কেউই এসে ভায়োলেন্স বন্ধ করতে পারবে না।”