কলকাতা: মহালয়াও (mahalaya) চলে এল। ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়া (mahalaya)। মনে পড়ে সেই ছোটবেলার সুদিনগুলোর কথা।ভোরে ভোরে মায়ের ডাকে ঘুম থেকে উঠে মহালয়া (mahalaya) শোনা। বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের (Birendra Krishna Bhadra) সেই কন্ঠস্বর।মহালয়ার (mahalaya) নায়ক কে?
যদি বলা হয় বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র,(birendra Krishna bhadra) তাহলে একবারেই ভুল হবেনা। সাদামাটা একজন বাঙালি আজও সবার হৃদয়ে। যতদিন মাধবসভ্যতা ততদিন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ।
বীরেন্দ্র কৃষ্ণকে (birendra krishna) ছাড়া কী মহালয়া (mahalaya) পূর্ণ হয়? পরনে অতি সাধারণ ধুতি আর গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে আছেন, শান্ত স্নিগ্ধ। বাঙালির পুরো রূপটা তাঁর মধ্যে। সুপারহিরো তিনি। বাঙালির নস্টালজিয়ার লম্বা তালিকায় তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা।
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের (birendra krishna bhadra) উদাত্ত কণ্ঠস্বর, শেষের দিকে পাঠ করতে করতে বিহ্বল হয়ে যাওয়া, বাঙালির গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। আর তাই তো ১৯৭৬ সালে মহানায়ক উত্তমকুমারকে দিয়ে মহালয়ার (mahalaya) অনুষ্ঠান করানো হলে উত্তাল হয় কলকাতা। গর্জে ওঠে বাঙালি।
কলকাতার রাস্তায় আছড়ে আছড়ে ভাঙা হয় হাজার হাজার রেডিয়ো। স্বয়ং মহানায়ক করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে বলেন ‘এই মণিহার আমার নাহি সাজে!’ ভাবার মতো। Simple living and high thinking— কথাটা সাজে বীরেন্দ্র কৃষ্ণের (birendra Krishna) ক্ষেত্রে।
মহালয়ার (mahalaya) ভোর যেমন আলাদা অনুভূতির সঞ্চার করে তার সবটা ভাষায় প্রকাশ করাও সম্ভব নয়। বাঙালির বুকে শিরশিরানি ভাব জাগিয়ে দেয় মহালয়া (mahalaya)। মনে পড়ে যায় কত স্মৃতি। বিশেষ করে ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে। কত ভোরে উঠে ঘুমঘুম চোখে মহালয়া শুনতাম। বেশ একটা শীত শীত ভাব করত।
ভোরবেলা পাড়ায় পাড়ায় বেজে উঠত রেডিয়ো। আর বাচ্চারা একটা চাদর গলার কাছে গিঁট বেঁধে ঘুরে বেড়াত এ পাড়া সে পাড়ায়। কী যে আনন্দ সে দিনটার কথা মনে হলে বুক কেমন করে!এখনকার মতো দুধের দাঁত ওঠার সময় থেকেই থাকত না ‘পড়ার চাপ’। একমাস ছুটি।
যত খুশি ঘুড়ি ওড়াও, কানমলা খাও। মহালয়াতে তাই শৈশবের মায়া মাখানো গন্ধটা আবার ফিরে পান অনেকেই। এখন তো বন্দী জীবন, আনন্দটাও ঘরবন্দি।
টেলিভিশনে মহালয়া (mahalaya) শুরু হওয়ার পর থেকে কমেছে মহিষাসুরমর্দিনী শোনা। তবে মহালয়ার আগে পুরনো রেডিয়ো সারানোর প্রবণতা আছে বাঙালির। দিন পাল্টেছে, গতিময় হয়েছে সময়। ঢাউস রেডিয়ো নয় এখন অনেকেই কানে ইয়ারফোন গুঁজে মহালয়া (mahalaya) শোনেন স্মার্টফোনে।
স্মার্টনেসের যুগেও আমরা খুব মনে করি সেই দিনগুলোর কথা।দুধের স্বাদ মনে হয় ঘোলে মেটানো। কিন্তু করার কিছু নেই। আধো ঘুমে, আধ জাগা হয়ে মনে হয় ওইতো কাশবনের মধ্যে দিয়ে দৌড়চ্ছে অপু আর দুর্গা আর কানের মধ্যে গুনগুন করে বাজতে থাকে “রূপং দেহি, জয়ং দেহি…!” আহ! বাঙালির প্রাণের মহালয়া।