‘সা রে গা মা পা-২০১৯’ এ দ্বিতীয় রানারআপ নোবেল প্রসঙ্গে আঞ্চলিক একটি প্রবাদ অনায়াসে যায়, “দুই দিনের বৈরাগি, ভাতেরে কয় অন্ন”।
ওপার বাংলার গায়ক নোবেল সম্প্রতি যে বিতর্কে জড়িয়েছেন, তাতে ভারতের মানুষ তো বটেই, বাংলাদেশের মানুষও হতবাক হয়েছেন।
রাতারাতি একটু গেয়ে যে তারকা মনে করছেন নোবেল লাভ করে ফেলেছেন, তাতে তিনি মূর্খ বলেই প্রতিপন্ন হলেন। এমনকি তিনি একথাও বলেছেন যে, শ্রেয়া ঘোষাল এবং গাগা ছাড়া ডুয়েটে আর কারো সঙ্গে গাইবেন না। এমনকি বাংলাদেশ-ভারতের আর কোন গায়কের সঙ্গেও নয়।
নোবেল যদি কারো সঙ্গে গান গাইতে না চান, গাইবেন না। তাতে কার কি এসে যায়? বিখ্যাত সব গায়কদের তো নোবেল আবিষ্কার করেননি। বরং নোবেলকে ওঁরা আবিষ্কার করেছেন। হয়তো কিছু মেধা ছিল তাঁর মধ্যে। কিন্তু সেই মেধার পরিচয় তিনি হাতেনাতে দিয়ে দিলেন জাতীয় সংগীতের অপমান করে। সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় নোবেলকে নিয়ে। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, ‘নিজের দেশের জাতীয় সংগীতকে যিনি অপমান করেন, তাঁকে দেশদ্রোহী ছাড়া আর কিই বা বলা যায়? এত ধৃষ্টতা কোত্থেকে জন্ম নিচ্ছে নোবেলের মনে’?
প্রসঙ্গক্রমে এসে যায়, প্রিন্স মাহমুদের লেখা ও সুরে জেমসের গাওয়া ‘বাংলাদেশ’ গানটি ঠিকই বহু বছর ধরে জনপ্রিয়। কিন্তু এত বছরে কোন রাজনৈতিক নেতা, কোন রাজনৈতিক দল, কোন বুদ্ধিজীবী, গায়ক জেমসের গানটিকে জাতীয় সংগীত করার দাবির মতো ধৃষ্টতা দেখাননি। বিশ্বকবি, বিদ্রোহী কবি আপামর বাঙালির কাছে আদর্শ। সেখানে এপার-ওপার বাংলা বলে কিছু নেই।
এছাড়া কোন আওয়ামী লীগ নেতা বলেননি গান থেকে জিয়াউর রহমানের নাম বাদ দিতে, কোন বিএনপি নেতা কখনও মুখ ফসকেও বলেননি, বঙ্গবন্ধুর কথা গান থেকে বাদ দিতে। অথচ আমরা এমন এক বীভৎস প্রজন্মের সাথে সময় কাটাচ্ছি, যেখানে এসে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের কথা শুনতে হচ্ছে!
এদিকে বাংলাদেশের পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের মতে, ‘নোবেল যে অপরাধ করেছে, তা নিতান্তই একটি বাচ্চা ছেলের কাজ। সে উসকানি পেয়ে একাজ করেছে’।
রবিবার ঢাকার একটি হোটেলে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি আর এক বেফাঁস কথা বলে বসলেন।
তাঁর মতে কলকাতার বাঙালিরা নাকি প্রকৃত বাঙালি নন। তিনি বলেন, “কলকাতার বাঙালিরা প্রকৃত বাঙালি নন, তারা বিশাল ভারত সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। তাদের দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতি রক্ষা করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর প্রকৃত বাঙালিরা একমাত্র বাংলাদেশেই বাস করে। অন্য বাঙালিরা আমাদের ভাই”।
তিনি নোবেলের স্বপক্ষে আরো বলেন, নোবেল নাকি উসকানি পেয়ে এমন মন্তব্য করেছেন। “আজকাল আমাদের জাতীয় সংগীত নিয়েও ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নোবেল আমাদের জাতীয় সংগীত নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছে। কার উসকানিতে নোবেল এগুলো করছে, কেন করছে, কেনবা জাতীয় সংগীত নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তা আমাদের জানা আছে”।
‘রবীন্দ্রনাথের লেখা জাতীয় সংগীত “আমার সোনার বাংলা” যতটা না দেশকে প্রকাশ করে, তার চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি প্রকাশ করে প্রিন্স মাহমুদ স্যারের লেখা “বাংলাদেশ” গানটিঃ নোবেল।
এমন কথা যিনি বলতে পারেন তাঁকে কোনদিন ক্ষমার চোখে দেখবে না এপার-ওপার বাংলার বাঙালি।