একদিকে যেমন ধর্ম নিয়ে মানুষের মধ্যে হানাহানি- বিদ্বেষ, অন্যদিকে তেমনি মানবিকতার নজিরও গড়ছে একাংশ।
ধর্ম নয়, মানবিকতাই যে শেষ কথা তা আরও একবার প্রমাণ করে দেখালো পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের অজ গ্রাম।
রবিবার সকালে আচমকাই পিতৃবিয়োগ হয় পূর্ব বর্ধমানের গলসির নতুনপল্লির লক্ষ্মণ মণ্ডলের। বাবা দুলাল মণ্ডলের (৭০) মৃত্যুতে দিশাহারা হয়ে পড়েন তিনি। কারণ দেহ সৎকার করতে খাটিয়া কাঁধে তোলারই পর্যাপ্ত লোক নেই।
শেষ পর্যন্ত এগিয়ে এলেন গ্রামেরই শেখ জিয়ারুল, শেখ কালু, জয়সীম মণ্ডল, লালন মণ্ডল, সাইফুল শেখরা। বাঁশ কেটে খাটিয়া তৈরি করা থেকে ফুলের ব্যবস্থা করলেন চাঁদা তুলে। আবার কাঁধে তুলে দেহ নিয়ে গেলেন শ্মশানে। সৎকারের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করলেন মুসলিম পড়শিরাই।
দিকে দিকে ধর্মের নামে হানাহানি, বিদ্বেষের বিরুদ্ধে মানবতার বার্তা দিলেন এখানকার বাসিন্দারা। হিন্দুর দেহ কাঁধে তুলে শেষকৃত্য সম্পন্ন করে মুসলিমভাইয়েরা। বুঝিয়ে দিলেন মনুষ্যত্বই পরম ধর্ম।
দুলাল মণ্ডল পেশায় ছিলেন বিড়ি শ্রমিক। তাঁর ছেলে লক্ষ্মণও পেশায় দিনমজুর। বাবার মৃত্যুতে কীভাবে দেহ সৎকার করবেন, বুঝতে পারছিলেন না ছেলে। দেহ কাঁধে তুলে শ্মাশানে নিয়ে যাওয়ার মতো পাড়ায় রয়েছেন মাত্র দু’জন হিন্দু। চারজন না হলে কাঁধ দেবে কে? এই নিয়ে ভেবে দিশা পাচ্ছিলেন না লক্ষ্ণণ।
শেষ পর্যন্ত জিয়ারুল-সাইদুলরাই সেই দায়িত্ব তুলে নেন নিজেদের কাঁধে। দেহ কাঁধে নিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে গেলেন নউলেশ্বর শ্মশাণে। সঙ্গী হয়েছিলেন আরও প্রায় ৬০ জন মুসলিম যুবক। শ্মশানে দেহ দাহ হওয়া পর্যন্ত ছিলেন তাঁরা। মুখাগ্নি অবশ্য লক্ষ্মণই করেছেন।
জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় মাত্র তিনঘর হিন্দু পরিবার। বাকি প্রায় ৩০০ পরিবার মুসলিম।