রাজনৈতিক যত ঝামেলাই চলুক না কেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী উপহার কিংবা শুভেচ্ছা জানাতে কখনোই ভুলে যান না। মোদির জন্মদিনে আজ (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সকাল টুইটারে শুভেচ্ছা বার্তা জ্ঞাপন করেছেন মমতা।
এবং আজই মুখ্যমন্ত্রী তিন দিনের জন্য দিল্লি সফরে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্য উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশ নেবেন তিনি।
বুধবার বিকেল সাড়ে চারটে থেকে শুরু হচ্ছে বৈঠক।
তবে প্রশাসনিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা তো হবেই। এর পাশাপাশি গত ৭২ ঘন্টা ধরে দেখা যাচ্ছে, সিবিআই ও রাজীব কুমারের মধ্যে লুকোচুরি খেলা চলছে। এবং দফায় দফায় কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি নবান্নে গিয়ে চিঠি ধরিয়ে আসছে।
রাজনৈতিক অবস্থানে দু-জন দুই মেরুর বাসিন্দা। দীর্ঘদিন তাঁদের মধ্যে কোনরকম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি।
এছাড়া, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তালিকা প্রকাশের পর পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসি হবে, জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি জোর গলায় তিলোত্তমা কলকাতায় সংবাদ মাধ্যমে বলে এসেছেন, বাংলায় এনআরসি হচ্ছেই। কেউ রুখতে পারবে না।
উত্তরপ্রদেশের বিজেপি বিধায়ক সুরেন্দ্র সিং মুখ্যমন্ত্রীকে রীতিমতো হুমকি দিয়েছেন, মমতার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাওয়া উচিত। তিনি যদি মানসিকতার বদল না করেন, তবে তাঁর অবস্থাও হবে দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের মতোই!
মমতা ব্যানার্জী এনআরসির বিরুদ্ধে ১২ সেপ্টেম্বরে জোর প্রতিবাদী মিছিলের নেতৃত্ব দান করেছেন। আগামিকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এনআরসির বিষয়টিও উঠবে।
এছাড়া অক্টোবর মাসে ভারত সফরে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, নরেন্দ্র মোদি এবং মমতা ব্যানার্জির আলোচনায় তিস্তার পানিবণ্টনের প্রসঙ্গটিও উঠে আসতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ঈদের মঞ্চেই হোক কিংবা স্বাধীনতা দিবস, কটাক্ষ করতে কখনোই ছাড়েন না। লোকসভা ভোটের পূর্বে মোদির উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “ওঁর গালে গণতন্ত্রের থাপ্পড় মারা উচিত”।
তাছাড়া বলিউড সুপারস্টার অক্ষয় কুমারের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপে মোদিজি মমতা দিদির প্রশংসা করে বলেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ। বছরে অন্তত তিন-চার বার তাঁকে কুর্তা, পাজামা আর বাঙালি মিষ্টি পাঠান মমতা।
এর পাল্টা উত্তর দিতে মমতা এক সেকেণ্ড দেরি করেননি। জানিয়ে দিয়েছেন আত্মীয়ের সেবা করা বাংলার সংস্কৃতি। কিন্তু লোকসভা ভোটে রসগোল্লাই শুধু থাকছে না। সে মিষ্টি হবে কাঁকড় মেশানো। খেলেই দাঁত ভেঙে যাবে!
একে মঙ্গলবার মোদির জন্মদিন, আবার শারদীয়া দুর্গাপূজা আসন্ন। তায় বহুদিন পর বিপক্ষ দলের সঙ্গে বৈঠক! ফলে মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লি যাত্রার কথা জানাজানি হতেই অনেকেরই কৌতূহল তৈরি হয়েছে, এ যাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর জন্য কি উপহার নিয়ে যাচ্ছেন দিদি?
মোদি-মমতার আলোচনা সম্পর্কে গুণীজনেরা মনে করছেন, এ ধরনের বৈঠক প্রকৃতার্থে হাতির দাঁতের মতো। দেখানোর জন্য একটি, আর খাওয়ার জন্য আর একটি। দু’জনের মধ্যে কী আলোচনা হবে, তা বাইরে আসার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। যা বাইরে বলা হবে, তা হবে শুধু লোক দেখানো।