যে মমতা ব্যানার্জী পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকপঞ্জি করার উদ্যোগ নিয়ে কেন্দ্রের সরকারকে ধিক্কার দিতে ছাড়েননি, লম্বা লম্বা ভাষণে নিজেও উত্তপ্ত ছিলেন, উত্তপ্ত করে তুলেছিলেন চারপাশের আবহাওয়াকে। সেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সামনে ভেজা বেড়াল হয়ে গেলেন! একটি আওয়াজ তুললেন না এনআরসি নিয়ে!
তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠক শেষে সঙ্গে সঙ্গে ট্যুইট করে জানিয়ে দিলেন এটা কোন রাজনৈতিক বৈঠক ছিল না, তাই এখানে এনআরসি নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। তাহলে আলোচনা হয়েছে কি নিয়ে ? মুখ্যমন্ত্রী তাহলে কি উদ্দেশ্য নিয়ে নয়া দিল্লি গেছেন? নিজেকে বাঁচাতে, নিজের কথা বলতে নাকি বাংলাকে বাঁচাতে?
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কি কি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তার একটি পঞ্জি তুলে ধরেন মমতা।
প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর দিদির বক্তব্য pic.twitter.com/TH6D3cezOK
— All India Trinamool Congress (@AITCofficial) September 18, 2019
পশ্চিমবঙ্গে মমতার এক রূপ, নয়া দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সামনে আরেক রূপ! আসলে তিনি চাইছেন কি?
তাঁর তো দেখা যাচ্ছে হাতির দাঁত। খাবারের জন্যে এক, দেখানোর জন্যে আরেক!
এনআরসি প্রসঙ্গে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছেন মমতা। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন ‘‘চার-পাঁচ পুরুষ ধরে রাজ্যে বসবাসকারী মানুষ এখন কাগজের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছে। মানুষ দিন এনে দিন খায়। তাঁরা এবার পূর্বপুরুষের কাগজ খুঁজবে নাকি পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দেবে? রাজিব কুমারের সিবিআই তদন্তের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে মুখ্যমন্ত্রী এতই মরিয়া যে, মানুষের আশঙ্কার কোনও গুরুত্ব তাঁর কাছে থাকল না? বিধানসভায় আমাদের প্রস্তাবে তৃণমূল সমর্থন করল, উনি নিজে রাস্তায় নেমে হুঙ্কার দিলেন পারলে দু’জনের গায়ে হাত দিয়ে দেখাও! আমরা বলছি, আমাদের লাশের উপর দিয়ে এনআরসি করতে হবে! আর মুখ্যমন্ত্রী সামনে প্রধানমন্ত্রীকে পেয়েও এক বার বলবেন না?’’ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘বাংলায় যদি এনআরসি চালু হওয়ার কোনও ব্যাপার না থাকে, তা হলে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ হল কেন? সেটা কি প্রহসন? মুখ্যমন্ত্রীর তার মানে গোপন কোনও এজেন্ডা আছে?’’
কেন্দ্রীয় পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় মমতাকে কটাক্ষ করে বলেছেন, সারদাকাণ্ডে আইপিএস আধিকারিক রাজীব কুমারকে সিবিআই খুঁজতে নামতেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার কথা মনে পড়ল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের? অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের ডাকা কোনও বৈঠকে তো হাজির হন না?
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি জোর গলায় বলেছেন, বাংলায় এনআরসি করা থেকে কেউ রুখতে পারবে না। এমনকি উত্তর প্রদেশের বিজেপি বিধায়ক সুরেন্দ্র সিং রীতিমতো মমতাকে হুমকি দিয়েছেন, তিনি যদি বাংলাদেশিদের প্রতি এতই দরদ দেখান, তাহলে তিনি ওপার বাংলার প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান!
সুরেন্দ্র সিং এখানেই শেষ করেননি। আরো বলেছেন যে, মমতা যদি তাঁর ঘৃণ্য মানসিকতা না পাল্টান তাহলে তাঁর অবস্থাও দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের মতোই হবে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে শুধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নয়, আজ বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে ফের আরেক দফার বৈঠক হবার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, রাজীব কুমারকে পাকড়াও করার জন্যে লেগেছে সিবিআই, ঠিক সে সময় মোদীর সঙ্গে মমতার সাক্ষাৎ নিয়ে বিরোধীরা দাবি করেছে, ‘‘রাজীব কুমারকে বাঁচাতেই মোদীর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন মমতা’’।
দীর্ঘ বছর পর সাপে-নেউলে সম্পর্ক মোদি-মমতার বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক মহলে উৎসাহ প্রথম থেকেই ছিল। গতকাল বৈঠক শেষে যখন মমতা বললেন, ‘বৈঠক খুব ভাল হয়েছে’ বলে মন্তব্য করলেন, তাতেই নানা সমীকরণের গন্ধ পাচ্ছেন রাজনীতির পোড় খাওয়া ব্যক্তিত্বরা।