কলকাতা: মা-বাবা হলেন ভারতের কেরালার রূপান্তরকামী যুগল Zahad Ziya। কোঝিকোড় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বুধবার সকালে শিশুটির জন্ম হয়েছে। তবে ছেলে না মেয়ে জানা যায়নি। জিয়া জানিয়েছেন তাঁদের সন্তান এবং Zahad দুজনেই সুস্থ রয়েছেন।
Ziya – Zahad নিয়ে তিন চারদিন আগেই কী লিখেছিলেন ফেসবুকে ডক্টর মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়? দেখবো আমরা–
“দুদিন ধরে পশ্চিম বাংলায় কান পাততে পারছি না , কেরলের একটি খবরে ! আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব পাড়া প্রতিবেশী নাজেহাল করে দিচ্ছে ” এই শুনেছ কাগজে খবর বেরিয়েছে তোমরা রূপান্তরকামীরা মা বা বাবা হতে পার !”
এই সংবাদগুলো করা হয় শুধুমাত্র ট্রান্সজেণ্ডারদের সমস্যাকে আরও বেশি করে অন্ধকারে ঠেলে ফেলার জন্য ! যিনি একজন জন্মসূত্রে পুরুষ ,শারীরিক ভাবে পুরুষ শরীর পেয়েও আন্তরিক অন্তরঙ্গতায় বিশ্বাস করেন তিনি একজন নারী , এ বিশ্বাস চেতনার এতো মূল গভীরে যে শরীরেও পরিবর্তন আসতে বাধ্য !
এটাই ট্রান্সজেণ্ডার মানুষের আসল রহস্য বা অবিসংবাদিত সত্য ! বায়োলজিক্যাল পুরুষ তার নিজস্ব আইডেন্টিটিতে তিনি নারী তিনি গর্ভধারণ করতে চাইবেন , মা হতে চাইবেন , কিন্তু কখনোই তার শরীরের দুর্ঘটনা-বীর্য দিয়ে বাবা হতে চাইবেন না , এটা ট্রু ট্রান্সজেণ্ডারদের জন্য জ্বলন্ত সত্য !
বিপরীত ভাবে এটিও সত্য একজন বায়োলজিক্যাল নারী যদি আইডেন্টিটিতে রূপান্তরকামী হন তিনি গর্ভধারণ করে তার বেবি বাম্পকে লুঙ্গি শার্টের মাঝখান দিয়ে কখনোই জনসমক্ষে মেলে ধরবেন না !
একজন ফিমেল টু মেল ট্রান্সজেণ্ডার মরে গেলেও গর্ভধারণের মাতৃত্ব মেনে নেবে না কারণ সে চাইবে বাবা হতে ! হ্যাঁ সে চাইবে নিজস্ব ঔরসে বাবা হতে , বিজ্ঞান এখনো যা সম্ভব করতে পারে নি, হয়তো পারবেও না !
আমি মানি না বাবা বা মা হতে গেলে নিজের বীর্য বা নিজের ডিম্ব জরুরী ! আমাদের এই নিত্য প্রহসনের যুগে হয়তো ডিএনএ টেস্ট করলে ধরা পড়বে রবীন্দ্রনাথের ‘গোরা’ উপন্যাসের গোরার মতো আমাদের জীবনের জন্মগত কোনো ট্র্যাজিক !
আমি তো হাজার চুরাশির মা ! গর্ভধারণ করেই মা হতে হবে এমন ধারণা কত বেঁচে থাকাকে বানচাল করে দেয় তা দেখেছি ! এখনো আমাদের দেশে আপাত দৃষ্টিতে সন্তান না হলে নারীর বন্ধ্যাত্বকে দাগিয়ে দিয়ে সেই নারীটির প্রতি অযথা নির্যাতন চালানো হয় !
…. একজন ট্রু ট্রান্সজেণ্ডার কখনো তার জন্মসূত্রে পাওয়া লিঙ্গ-শরীর দিয়ে বাবা বা মা হতে চাইবেন না ! আমরা ট্রান্সজেণ্ডাররা সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারি অন্যের বাচ্চাকে আপন করে নিয়ে !
ভালোবাসাই শেষ কথা , দত্তক আইন কোনো কাজের কথা নয় ! মহারাষ্ট্রে এবং পশ্চিমবঙ্গে এমন দৃষ্টান্ত ভুরি ভুরি আছে যেখানে ট্রান্সজেণ্ডাররা অন্যের অনাথ বাচ্চাকে প্রাণ ঢেলে মানুষ করছেন ! আনন্দ থেকে বহুবছর আগে প্রকাশিত মানব চক্রবর্তীর ‘সন্তাপ’ উপন্যাসটি পড়ে দেখতে অনুরোধ করি !
ট্রান্সজেণ্ডারদের মানসিক অসুস্থ প্রমাণ করার জোরদার একটা আয়োজন আছে সমাজে , সংখ্যাগরিষ্ঠর চাপে ট্রান্সপার্সনরা ডিপ্রেশনে যেতে বাধ্য হয় ! মেন স্ট্রিমের কিছু মানুষের ফোবিয়া ট্রান্সপার্সনদের ক্রীতদাস করে রাখার ষড়যন্ত্র দেখে নীরবে চোখের জল ফেলা ছাড়া আর তো কোনো উপায় দেখি না” !