এ যেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জয় নয়, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়। কারণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা সবসময়ই ফাঁক দিয়ে গলে গিয়ে স্বার্থোদ্ধার করতে পছন্দ করে থাকেন।
আপ প্রধান কেজরিওয়ালের (Arvind Kejriwal) নেতৃত্বে এই নিয়ে পরপর তিনবার দিল্লিতে জয়ের পরই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচ্ছ্বাসপূর্ণ উত্তর সাংবাদিকদের।
‘আপনি কি অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন..?’ সাংবাদিকের প্রশ্নে জবাব দিলেন , ‘নিশ্চয়ই, কেন করব না?.. আমি খুব খুশি আপ জিতেছে’।
সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে শুভেচ্ছাবার্তা জ্ঞাপন তৃতীয়বারের জন্যে মুখ্যমন্ত্রীর আসন অধিকার করা অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে।
দিল্লিতে বিজেপির হারে আনন্দের শীর্ষে পৌঁছেছে তৃণমূল শিবির। আম আদমি পার্টির জয়কে রীতিমতো উদযাপন করতে দেখা যায় তাঁদের। কেননা রাজ্যে তাদের প্রধান বিরোধী দল এখন ভারতীয় জনতা পার্টিই। গত বছর, রাজ্যের লোকসভা নির্বাচনে ৪০ টির মধ্যে ১৮ টি আসন পায় বিজেপি, যেখানে তার আগের বার এ রাজ্যে গেরুয়া দল পেয়েছিল মাত্র ২ টি লোকসভা আসন।
এবার দিল্লি বিধানসভার ৭০ আসনের মধ্যে ৬২ টিতে জয়লাভ আম আদমি পার্টির, তৃতীয়বার তাই সরকার গড়তে চলেছে তারা। যদিও ২০১৫ সালের থেকে কিছুটা কম আসন পেয়েছে এবার। গতবার ছিল ৬৭ টি আসন, সেখানে এবার আপ পেয়েছে ৬২ টি আসন। যদিও ২৭০ জন সাংসদ, ৭০ জন মন্ত্রী সহ দলের অন্যান্য নেতাদের দিয়ে প্রচার চালিয়েও মাত্র ৮ আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি, যদিও গতবারের থেকে ভাল ফল করেছে তারা, গতবার বিজেপি দিল্লিতে পেয়েছিল ৩ টি আসন।
বিদ্যুৎ ও জল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের মতো বিষয়গুলিতে জোর দিয়ে ওই সব ক্ষেত্রে উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। অনেকেই বলছেন, তাঁর এই কাজই মন জিতেছে দিল্লির জনতার। যার ফলে ফের একবার আম আদমি পার্টিকেই পুনর্নির্বাচিত করেছে তাঁরা।
বাঁকুড়া থেকে এদিন ফের কেজরিওয়ালের জয়কে হাতিয়ার করে বিজেপিকে তোপ দাগলেন মমতা। তিনি বিজেপিকে ‘না ঘরকা না ঘাঁটকা’ বলে তীব্র ব্যাঙ্গোক্তি করেন।
‘এই জয় কেজরিওয়ালজির জয়’ । তাঁর দাবি, আম আদমি পার্টির উন্নয়নই কেজরিওয়াল শিবিরকে জিতিয়েছে।
মমতা কী যাবেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে?
উত্তর আসে, তিনি চেষ্টা করবেন। এখন কিছুই বলতে পারছেন না।
উল্লেখ্য, ২৯ ডিসেম্বর ঝাড়খণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আদতে এনআরসি, সিএএ বিরোধি কার্যকলাপ গড়ে তুলেছিলেন।
অ-বিজেপি জোটকে নিয়ে রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিলেন মমতা আরো একবার। বিরোধি জোটে সলতে পাকানোর কাজ সর্বাগ্রেই শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
সোরেনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে সে উদ্দেশ্যেই একদিন আগেই উপস্থিত হয়েছিলেন মমতা। কানাঘুষো রাজনৈতিক মহলে।
তাহলে এবারও কী ফের নয়া দিল্লিতে কেজরিওয়ালের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে একই কার্য করতে চলেছেন মমতা?
আদৌ তা কতটুকু কাজে আসবে, সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
কারণ ঝাড়খণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী উপস্থিত না থাকলেও এনআরসি, সিএএ’র বিরুদ্ধ প্রতিবাদে মমতাকে সম্মতি জানিয়েছিলেন তিনি।
নেতারা সকলেই তাতে সায় দেন। এর পরে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়ার ডাকে ১৩ জানুয়ারি, সোমবার বৈঠকের দিন স্থির হয়েছিল।
কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যজনকভাবে ‘‘কংগ্রেস এবং সিপিএম এখানে যে ভাবে গুন্ডামি করছে, তাতে আমি ১৩ তারিখের দিল্লির বৈঠকে আর যাব না বলে ঠিক করেছি। মাফ করবেন” বলে বৈঠকে যোগদান করেননি।
এ নিয়ে সিপিএম মমতা ব্যানার্জীকে তুলোধুনা করে। তাঁদের অভিযোগ, “আসলে তা কা কা ছিঃ ছিঃ নয়, কাছাকাছি, বিজেপির কাছাকাছি।”