রবিবার চেন্নাইয়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারমণ বললেন, তসলিমা নাসরিনকে ভারতের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়েছে।
ক্ষণিকের মধ্যে চারদিকে প্রচণ্ড হইচই পড়ে গেছে এই বার্তায়। তসলিমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা চাইছেন, এই বার্তা যদি সঠিক হয় আগামিতে, তাহলে এর চেয়ে আনন্দের সংবাদ আর কিছু নেই। কারণ মানবতাবাদী, নারীবাদী একজন লেখককে যে দেশ গ্রহণ করবে আঁচল পেতে সে দেশ ধন্য হবে।
এবার চারদিকের চাপান উতোরের মাঝে দার্শনিক বার্তা প্রেরণ করলেন তসলিমা নাসরিন।
প্রথম অবস্থায় হালকা রসিকতা করেই তিনি লিখলেন, নাগরিকত্ব পাওয়ার কোন পথ দেখছি না। কারণ আমি তো নাগরিকত্বের জন্যে অ্যাপ্লাইই করিনি!
এছাড়া তিনি নাগরিকত্ব চান না, বরং রেসিডেন্স পারমিটটা বাড়িয়ে দিলেই যে তিনি খুশি হবেন সেকথা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন।
ফেসবুক পোস্টে একেবারে শেষে হৃদয়বিদারক লেখাটি তিনি লিখেছেন। যা মনুষ্য জীবনের সারসত্য।
“কী হইব নাগরকত্ব দিয়া? কিছুই না। আইজ আছি, কাইল নাই। আমার হইল যেইখানে রাইত, সেইখানে কাইত।
দুনিয়াডায় এক যাযাবর মুসাফির আমি। আমার মন টাই আমার ঘর বাড়ি। আর কী লাগে এক জীবনে?”
লেখক তসলিমা নাসরিনের অন্তর কাঁপানো এমন লেখায় অসমের বিখ্যাত গায়ক ড০ ভূপেন হাজারিকার “আমি এক যাযাবর, পৃথিবী আমাকে আপন করেছে, ভুলেছি নিজের ঘর, তাই আমি যাযাবর।” অর্থপূর্ণ গানটির সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
লেখকের ফেসবুক পোস্টটিঃ
“বাজারে বলাবলি হইতাছে আমি নাকি ভারতের নাগরিকত্ব পাইয়াই যাইতাছি। অর্থ মন্ত্রি বলছেন আমি পাইয়া গেছি নাগরিকত্ব। যদিও ভুল কইরা বলছেন। স্লিপ অফ টাং।
বাট কথা হইলো কেমনে আমি পাবো নাগরিকত্ব। পাওয়ার রাস্তা তো দেখতাছি না।
দেখতাছি না, কারণ আমি তো এপ্লাইই করি নাই নাগরিকত্বের জন্য। তাইলে কেম্নে কী!
বছর বছর আমার রেসিডেন্স পারমিট বাড়াইলেই আমি খুশি। দুইদিনের দুনিয়ায় আমাদের দুইদিনের বসবাস। কী দরকার নাগরিক হওয়ার।
নাগরিক হইলে সুবিধা কী শুনি! আমি তো বাংলাদেশের নাগরিক, আমারে দেশ থেইক্যা বাইর কইরা দেয় নাই? আমি তো সুইডেনের নাগরিক, ওই দেশে থাকতেই তো আমি পছন্দ করি না। তাইলে?
রেসিডেন্স পারমিট থাকলেও তো ইচ্ছা না হইলে রিসাইড করতে দেয় না সরকার বাহাদুর। আমার তো ছেল রেসিডেন্স পারমিট। ভারতের যে কোনও স্থানে বাস করার অনুমতি ত ছেল। আমারে লাত্থাইয়া ভাগায় নাই কলিকাত্তা থেইকা? ভাগাইছে। ‘ইন্ডিয়া’ থেইকাও ভাগাইছে। শুধু ‘ভারত’ থেইকা ভাগাইতে পারে নাই। কারণ ওইখানে আমার মন পইড়া ছেল।
কী হইব নাগরকত্ব দিয়া? কিছুই না। আইজ আছি, কাইল নাই। আমার হইল যেইখানে রাইত, সেইখানে কাইত।
দুনিয়াডায় এক যাযাবর মুসাফির আমি। আমার মন টাই আমার ঘর বাড়ি। আর কী লাগে এক জীবনে?”