ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে তিন তালাকের আবর্জনা থেকে মুক্তি ঘটছে মুসলিম নারীসমাজের। কিন্তু আমরা যদি ভেবে থাকি দেশে আইন চালু হবার সঙ্গে সঙ্গে সমাজও পরিবর্তন হয়ে যাবে, তাহলে সে ভাবনা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ মানুষ পঙ্গু,পচা মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না সহজে। ফলে নারীর জীবন যে অন্ধকারে ছিল, সে অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে।
উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে মঙ্গলবার তিন তালাকের প্রতিবাদ করায় অন্তঃসত্ত্বা বধূকে বেধড়ক মারধর করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
আক্রান্তের নাম শাহানাজ খাতুন (২৪)।
বছর তিনেক পূর্বে মোতাব্বির আলমের সঙ্গে শাহানাজের বিয়ে হয়। এরপর একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হওয়ায় স্বামীসহ পরিবারের লোকজন স্ত্রীকে প্রবল শারীরিক-মানসিক নির্যাতন চালানো আরম্ভ করে।
অত্যাচার থেকে মেয়েকে বাঁচানোর জন্যে গত তিন বছরে শ্বশুরবাড়িতে কখনও ১০ হাজার আবার কখনও ১৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন বলে দাবি শাহানাজের বাড়ির লোকেদের। কিন্তু লাভ হয়নি কিছু। শাহানাজের ওপর নির্যাতনের মাত্রা উত্তরোত্তর বেড়েই যায়।
মঙ্গলবার হঠাৎ স্ত্রী শাহনাজকে তিন তালাক দেয় স্বামী মোতাব্বির আলম। কিন্তু তালাকের বিরোধিতা করে স্ত্রী। আর তাতেই অন্তঃসত্ত্বা বধূর ওপর চড়াও হয় শ্বশুরবাড়ির লোকজনেরা। নির্মমভাবে মারধর করে তাঁকে।
বাস্তবতার সঙ্গে সংযোগবিহীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন স্বামীর সাফ জবাব, “আমার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছি। ওকে গ্রহণ করা আর কোনওভাবেই সম্ভব নয়। আমি আর ওর সঙ্গে ঘর করব না।”
ইটাহার থানার পুলিশ অভিযুক্ত জামাইকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮(এ)/৩০৭ ধারায় মামলা রুজু হয়। এদিন আদালতে তোলা হলে অভিযুক্ত মোতাব্বিরকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
আহত শাহনাজ স্বামীর কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “তালাক দেওয়ার নিয়ম নেই। আমি তালাক দেওয়ায় প্রতিবাদ করি।”
এই ঘটনাই প্রথম নয়। তালাকের বিরোধিতা করায় ৬ আগস্ট উত্তরপ্রদেশে স্ত্রী সায়েদাকে ফোনে তিন তালাক দিয়েছিল স্বামী। স্ত্রী মানতে চাননি। তারই খেসারত দিতে পাঁচ বছরের মেয়ের সামনেই সায়েদাকে গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারল তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তিনি বলেছেন ‘Triple talaq is not in the quran.’