কথায় বলে না ‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়’। গেরুয়া-তৃণমূলের তীব্র কষাঘাতের মাঝখানে পড়ে সাধারণ মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত! সবেতেই এই মানুষগুলোরই মৃত্যু হয়। যাঁরা চেয়ারে বসে পায়ের ওপর পা তুলে চায়ের কাপ হাতে তুলে নিচ্ছেন, তাঁদের ভাবনা আছে কী কিছু?
“ব্যক্তি স্বাধীনতা এদেশের জনগণের আছে যেখানে কোনও ব্যক্তি কোনও ব্যক্তির সঙ্গে বার্তালাপ করলে সেটার ওপরেও নজরদারি করা হচ্ছে?
এখন ল্যান্ড ফোন, মোবাইল ফোন, হোয়াটস অ্যাপ কোনোকিছুই নিরাপদ নয়। বিভিন্ন সংস্থা নজরদারি চালাচ্ছে। আপনার ফোনও ট্যাপ করা হচ্ছে। আমার ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে। এই অবস্থায় আমরা কি করতে পারি? আমরা কি নজরদারি ছাড়া কথা বলতে পারবো না? এটি খুব গুরুতর বিষয়। আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব এই অনভিপ্রেত বিষয়টিতে নজর দিতে। আমি জানি কেন্দ্রীয় সরকার এই ইজরায়েলি সংস্থাকে দিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক, মিডিয়া, বিচারক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের ওপর নজর রাখছে। এটা অন্যায়, তুমি কারও ব্যাক্তিগত গোপনীয়তা কেড়ে নিতে পারোনাঃ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতার বক্তব্য।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা এবং বিরোধী দল বিজেপির সঙ্গে সংঘর্ষ, কথাবার্তা এমন তীব্র আকারে পর্যবসিত হয় যে, সেই সাধারণ মানুষগুলো, যাঁদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, তাঁরা রীতিমতো ধন্দ্বে পড়ে যায় যে পক্ষ নেবে কার? কে সত্যি কথা বলছে? কোন সরকার এলে একটি শান্তিতে জীবন নির্বাহ করা যাবে?
চল্লিশোর্ধ এক ব্যক্তি জানালেন, “আমাদের ইভিএমের সামনে গিয়ে ক্ষাণিকক্ষণ দাঁড়াতে হয়, ভাবতে হয়, ভোটটা কাকে দেব! নিরপেক্ষ তো থাকতে পারি, কিন্তু নিরপেক্ষ থাকাটা তো সমস্যার সমাধান নয়। আজ দেশের এমন পরিস্থিতিতে ডিজিটেল যুগের মানুষেরা যাঁরা একপলক সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়া থাকতে পারেন না, আসক্তি নয়, সমস্ত কাজগুলোই যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় সারছেন, তাঁরা কিভাবে কাজ করবেন? পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দেবেন? আমরা কাকে ভোট দেব? কাকে গদিতে বসাবো?” জনসাধারণ হতাশায় ডুবে যাচ্ছে, তারা কাকে নির্বাচন করবে, বুঝে উঠতে পারছে না। কারণ ঠকে ঠকে যে তাদের পিঠ ঠেকেছে দেয়ালে গিয়ে!
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে শাসিয়েছেন, সুতরাং দিলীপবাবুই বা কম কিসে?
তিনিও সোচ্চার হলেন!
তর্জন-গর্জন করে জানিয়ে দিলেনঃ আসলে ভোটে হেরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উল্টোপাল্টা বকতে শুরু করেছেন। যেটুকু সময় আছেন সঠিকভাবে কাজ করুন।
দিলীপ ঘোষের কথায়, এটাই অবশ্য স্বাভাবিক। কারণ পরাজিত হলে এসব কথাই বলে সবাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর অন্যথা করছেন না।
তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সময় শেষ হয়ে এসেছে। আর বেশিদিন তিনি কুর্সিতে নেই। তাই যতদিন আছেন, কালবিলম্ব না করে কাজ করুন। এর পাশাপাশি এই ঘটনায় মুখ খুলেছেন কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ও । কৈলাশ বলেন, মমতার সরকারও ফোন ট্যাপ করে। তাদের উচিত আগে নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখা। তারপর অন্য কারও বিরুদ্ধে আঙুল তোলা।
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গ্রাহকদের ফোনে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আড়ি পাতার একটি সফটওয়্যার ঢুকিয়েছে এক সংস্থা। তবে এই সংস্থার নিশানায় রয়েছে আইনজীবী, রাজনীতিক, সাংবাদিক ও সমাজকর্মীরা। এদের সমস্ত গোপন তথ্যের উপর আড়ি পাতছে এই সংস্থা।
এই মুহূর্তে ভারতে বইছে ভোটের হাওয়া। ঠিক এমন সময়েই হোয়াটসঅ্যাপের তথ্য়ের উপর নজরদারির খবরে চিন্তিত হয়ে পড়েছে বিভিন্ন মহল। জানা যাচ্ছে ইজরায়েলের একটি সংস্থা এই কাজ চালাচ্ছে। এই সফটওয়্যারও তারাই তৈরি করেছে, যার মাধ্য়মে হোয়াটসঅ্যাপের কিছুই আর গোপন থাকছে না।
হোয়াটসঅ্যাপে এই আড়ি পাতার ঘটনা যে সত্য, তা স্বীকার করেছেন মার্ক জুকেরবার্গও। এই আড়ি পাতা রুখতে তিনি হোয়াটসঅ্য়াপটিকে আপডেট করারর পরামর্শ দিয়েছেন।
সত্যিকারের সমাধান, আশু চাইছে জনতা। তাঁরা জানাচ্ছে, “বিজেপি কংগ্রেস, তৃণমূল আমরা বুঝি না। আমরা শান্তি চাই। নেতা-নেত্রীরা তাঁদের মতো করে বাক-বিতণ্ডা চালাতে থাকুন, আমাদের যেন ভাতে মারা যেতে না হয়। আজ বড়লোকের হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক করছে, ফেসবুক হ্যাক করছে, কাল আমাদের করবে!”