গর্ভগৃহ উহান। সেখান থেকে সারা পৃথিবীতে আছড়ে পড়েছে মারাত্মক করোনা ভাইরাস। মানবজীবন তছনছ করে ফেলেছে। ভারতে চলছে তৃতীয় দফার লকডাউন।
কিন্তু আমরা কী ফের পাবো পূর্বের প্রাণমাতানো জীবন? পারবো আমরা প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গে পার্কে হাঁটতে? কী বলছেন গবেষকরা?
তাঁরা পরিষ্কার জানাচ্ছেন, করোনা পূর্বের জীবনে আপাতত ফেরা সম্ভব নয়।
তাঁরা জানাচ্ছেন, সংক্রমণ মাস কয়েক পরে যদি কমেও যায়, তা হলেও কবে ফেরত আসবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর (আইসিএমআর) বিজ্ঞানীদের পরামর্শ, করোনাকে জীবনের অংশ মনে করেই অন্ততপক্ষে আগামী কয়েক বছর চলা প্রয়োজন। লকডাউন চলুক বা উঠে যাক, তার সঙ্গে এই সত্যের খুব বেশি হেরফের হবে না।
প্রতিষেধক ও সংক্রমণজনিত রোগের বিরুদ্ধে ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে যে বিজ্ঞানীর অন্যতম অবদান, সেই নোবেলজয়ী পিটার সি ডোয়ার্টিও আনন্দবাজার পত্রিকাকে জানিয়েছেন, যদি দেখা যায় এই সার্স-কোভ-২ ভাইরাস মানবশরীরে দীর্ঘদিন ধরে থাকছে এবং সময়ের সঙ্গে তার মিউটেশন হচ্ছে, তা হলে অচিরেই এমন পরিস্থিতি আসতে পারে যেখানে প্রতি বছর একটি করে প্রতিষেধক নিতে হবে।
বিজ্ঞানীদের মতে, কোনও ভাইরাসের পরিবেশ টিকে থাকাটা নির্ভর করে তার মিউটেশনের উপরে। যদি দেখা যায়, মিউটেশন আর তেমন ভাবে হচ্ছে না, তা হলে সেই ভাইরাস আস্তে-আস্তে তার ক্ষমতা হারায়। কিন্তু ভাইরাসের মিউটেশন চলতে থাকলে নতুন পদ্ধতি ভাবা ছাড়া পথ নেই। পিটার সি ডোয়ার্টির মতে, ‘‘সার্স-কোভ-২ ভাইরাস যদি মানুষের শরীরে দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে থাকে এবং মিউটেট করতে থাকে, তা হলে এমনও হতে পারে যে, বার্ষিক প্রতিষেধক নেওয়ার প্রয়োজন পড়ল। কারণ, ভাইরাসের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা প্রয়োজন।’’
‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর সেল সায়েন্স’-এর এক বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘সমস্ত জীবিত অর্গানিজ়মেই মিউটেশন হয়। যদি দেখা যায় যে, সেই মিউটেশন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাচ্ছে, তখন সেই গোষ্ঠী টিকে যায়। যদি খাপ না-খায়, তা হলে তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। সার্স-কোভ-২ ভাইরাস চিরস্থায়ী কি না, সেটা বলা সময়সাপেক্ষ। এমনও হতে পারে যেমন ভাবে মার্স বা সোয়াইন ফ্লু পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়নি, কোভিড-১৯-ও সেভাবেই থেকে যাবে।’’ ‘ট্র্যানস্লেশনাল হেলথ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট’-এর বিজ্ঞানীদের একাংশের বক্তব্য, যদি কয়েক মাস পরে সারা বিশ্বে কোথাও আর কোনও নতুন সংক্রমণ না-হয়, যাঁদের স্বল্প উপসর্গ বা যাঁরা উপসর্গহীন, তাঁরা নিজে থেকেই সুস্থ হয়ে যান, আর ক্রিটিক্যাল রোগীদের একাংশ মারা যান, তার পর যে জীবনটা শুরু হবে, তা কখনওই কোভিড-১৯ সংক্রমণের আগের জীবন হবে না। সংস্থার ইমিউনোলজির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অমিত অবস্থীর কথায়, ‘‘সংক্রমণ থামার পরেও কমপক্ষে দু’বছর কোভিড-১৯-এর আগের জীবন ভুলে যাওয়া শুধু নয়, বরং কোভিড-১৯-এর সঙ্গে আমাদের সহাবস্থান করতে হবে।’’
সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা