বাড়ছে করোনা, বাড়ছে অন্ধবিশ্বাস! ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, অসমেও চলছে দেদার করোনা দেবী পূজা! করোনাকে দেবীজ্ঞানে পূজা আরম্ভ করেছে মানুষ।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলায় গঙ্গার তীরে প্রার্থনা এবং নানা প্রকার উপাচারের মাধ্যমে ‘করোনা দেবী’ পূজা করেন গ্রামের মানুষ। অন্যদিকে বিহারেও একই পরিবেশ দেখতে পাওয়া গেল। বক্সার জেলায় করোনা দেবীর পুজো দিলেন স্থানীয়রা এই বিশ্বাসে যে কোভিড যেন তাদের প্রিয়জনের শরীরে জেঁকে না বসে। অপরের মঙ্গলকামনায় ইতিবাচক দিক অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু যেখানে বিশেষজ্ঞরা বারংবার সতর্ক করছেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, মাস্ক পরিধান করে আরো অন্তত ৫ বছর সাবধানতার সাথে কাটাতে হবে! সে জায়গায় একবিংশ শতাব্দীতেও কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোকজন নিজেদের বিশ্বাসে অটুট রয়েছেন। সামাজিক দূরত্ব না মেনে করোনাকে প্রতিহত করা নয়, করোনা প্রবেশের জন্যে সদর দরজা খুলে দিয়েছেন তাঁরা।
উত্তর দিনাজপুরের রাজগঞ্জের নারীরা রীতিমতো ভক্তিশ্রদ্ধার সঙ্গে গঙ্গাস্নান সেরে করোনা মায়ের উপাসনা করে ৯টি লাড্ডু, ৯টি ফুল, ৯টি লবঙ্গ, ৯টি ধূপকাঠি ধরিয়ে নদীর পাশে গঙ্গার মাটিতে পুঁতে দেন। তাদের এমন ভক্তিশ্রদ্ধা দেখে হতবাক হয়েছেন অনেকেই। অসমেও একই ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। গৃহস্থ অসমিয়া পরিবারটি দাবী জানাচ্ছিল, তাঁরা স্বপ্নে করোনা প্রতিরোধের ওষুধ পেয়েছেন। এবং সে ওষুধ নেয়ার জন্যে সে বাড়িতে সামাজিক দূরত্ব ছাড়াই মানুষের ভিড় জমতে শুরু করে।
গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, করোনা যিনি পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন সেই দেবীকে তুষ্ট করতে পারলে এই রোগ পালাবে ভয়ে! সে জন্যেই মহিলারা সমবেত হয়ে ওই পূজা করতে শুরু করেছেন।
করোনা দেবী পূজার এই বার্তা আমাদের ফের মধ্যযুগে টেনে নিয়ে গেল। যে সময় সাপের ছোবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে মানুষ শুধুমাত্র ভয়ে মনসা পূজা শুরু করেছিল। এই কথাগুলো আমরা মনসামঙ্গল কাব্যে পাই।
ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশের লেখক তসলিমা নাসরিনঃ
‘”ভয়ানক করোনাকালে মাস্ক ছাড়া, সোশ্যাল ডিসটান্সিং ছাড়া মানুষ করোনা মায়ের পুজো দিতে ব্যস্ত হয়েছে! কুসংস্কার কী কোনকালে মরবে? মানুষ কবে বিজ্ঞানকে গ্রহণ করবে?”