যে মেলার কথা না বললে বাংলার মেলা সম্পূর্ণতা পায় না, তা হল বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা । সে শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছে বিশ্বভারতী ।
৪ জুন অর্থাৎ মঙ্গলবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্বভারতী জানিয়ে দিয়েছে, আগামি ১৪২৬ সালের ৭-৯ পৌষ শান্তিনিকেতন পৌষ উৎসবের ঐতিহ্যপূর্ণ সমস্ত ক্রিয়া যথোচিত মর্যাদায় পালন করা হবে । কিন্তু পৌষ মেলার দায়িত্ব এখন থেকে আর বিশ্বভারতীর পক্ষে নির্বাহ করা সম্ভব হবে না ।
পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত প্রতিবছর পরিবেশ আদালতে মামলা করছেন । সুভাষবাবু বলেন, আন্তর্জাতিক মেলার আয়োজন করা হবে, অথচ সেখানে পরিবেশ নিয়ম মানা হবে না !
সুভাষ বাবুর করা মামলায় বিশ্বভারতীকে পার্টি করা হচ্ছে । কর্তৃপক্ষের দাবি, পরিবেশ আদালত সহ দেশের সংশ্লিষ্ট সমস্ত প্রতিষ্ঠানের পালনীয় শর্তাবলি পূরণ করা এবং এই বৃহৎ আয়তনের মেলা পরিচালনা করার মতো পরিকাঠামো বিশ্বভারতীর নেই ।
দেখা যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে কিন্তু একা শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের পক্ষে বিপুল মেলা পরিচালনা করা অসম্ভব । ট্রাস্টের ট্রাস্টি কালিকারঞ্জন চ্যাটার্জীও সে কথাই বলেছেন যে, বিশ্বভারতীর সাহায্য ছাড়া এই মেলা পরিচালনা করা অসম্ভব ব্যাপার ।
মঙ্গলবার এ নিয়ে এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় মেলা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত অধ্যাপক, শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সদস্যদের সঙ্গে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের পৌষমেলার পরেই জাতীয় পরিবেশ আদালতে প্রথম মামলাটি করা হয়েছিল । প্রদূষণমুক্ত মেলার জন্যে বিশ্বভারতীর বহু চেষ্টার পরও এই বছর ফের আদালতে মামলা করা হয়েছে ।
বৈঠকে জোর দাবি ওঠে যে, কোথাও তো লেখা নেই যে, বিশ্বভারতীই এই মেলা করবে ? শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের কথাই উল্লেখ আছে ।
আরো দাবি উঠেছে, পৌষ মেলা থেকে যা কিছু আয় হয়, তার কিছুই বিশ্বভারতীর তহবিলে যায় না । এই সমস্ত কারণে বিশ্বভারতীর সিদ্ধান্ত, পৌষমেলার দায়ভার থেকে সরে যাবার ।
উল্লেখযোগ্য ,মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯৪ সালে পৌষ উৎসব ও গ্রামীণ মেলার সূচনা করেছিলেন । পরবর্তীকালে এই মেলার প্রাণের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাণ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়ায় ।
উৎসব ও মেলার দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছিল শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের উপর। ক্রমে ক্রমে মেলার আয়তন বাড়ার ফলে এবং ১৯২১ সালে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর সেই বছর থেকেই মেলার পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে বিশ্বভারতী।
ফি বছর ৭ পৌষ সকালে ব্রহ্মোপাসনার মাধ্যমে মেলার সূচনা হয় । সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথের বাইরে সমাজ সংস্কারক রবীন্দ্রনাথের যে পরিচয়, তা এখানে বিশেষভাবে অনুভূত হয় ।