প্রখ্যাত বাঙালি বাগ্মী, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও লেখক বিপিনচন্দ্র পালের আজ ১৬১ তম শুভ জন্মবার্ষিকী।
স্বদেশপ্রেমিকের চরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলাট এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Humble tributes on birth anniversary of #BipinChandraPal, one of the main architects of Swadeshi movement during India's struggle for independence. As a writer, orator and social reformer, his contributions can never be forgotten.
— Ashok Gehlot (@ashokgehlot51) November 7, 2019
Homage to Bipin Chandra Pal, freedom fighter, on his birth anniversary
স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপিন চন্দ্র পালের জন্মবার্ষিকীতে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) November 7, 2019
বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে দেশ উত্তাল হয়ে ওঠায় বিপিনচন্দ্র পালের বুকে স্বদেশ প্রেমের আগুন জ্বলে উঠল। আচার্য শিবনাথ শাস্ত্রীর পৌরোহিত্যে বিপিন পাল বুকের রক্ত দ্বারা লিখে শপথ করলেন-
১. সরকারী চাকুরি করিব না
২. বৃটিশের দাসত্ব করিব না।
৩. প্রয়োজনের অতিরিক্ত সঞ্চয় করিব না।
৪. যথাসাধ্য স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করিব।
তাঁর করা উপরের প্রতিজ্ঞা থেকে বোঝা যায় জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন বিপিনচন্দ্র পালের মনে প্রচণ্ডভাবে রেখাপাত করেছিল। তিনি যেসব প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তা রক্ষা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন।
বিপিনচন্দ্র পাল ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ, লেখক, সাংবাদিক এবং সমাজ সংস্কারক। উপমহাদেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে তাঁর বাগ্মীতা ছিল অসাধারণ। তিনি ছিলেন চরমপন্থী রাজনীতির অন্যতম প্রধান প্রবক্তা।
উনিশ শতকের আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ক্রমবিকাশ হয়েছিল একদল তরুণ লেখকের হাতে। তাঁদের মধ্যে বিপিনচন্দ্র পালের ভূমিকা অন্যতম। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরও বিপিনচন্দ্র পালের জীবনের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে সাহিত্য সাধনা। জীবিকার জন্য কখনও বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন আবার কখনও স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করেছেন।
বর্তমান বাংলাদেশের হবিগঞ্জ ধন্য যে বিপিনচন্দ্র পাল যিনি সোনার চামচ মুখে নিয়ে সে গ্রামে জন্মেছিলেন আজকের এই পবিত্র দিনে অর্থাৎ ৭ নভেম্বর তারিখে, সাল ১৮৫৮।
বিপিনচন্দ্র পাল জীবনের প্রথম ১৮৭৯ সালে উড়িষ্যার কটক একাডেমীতে প্রথমে সাধারণ শিক্ষক হিসেবে এবং পরে প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেন। তবে খুব বেশিদিন তিনি সেখানে চাকুরি করেননি। ১৮৮০ সালের জুলাই মাসের শেষে কলকাতায় ফিরে যান। ১৮৮১ সালের আগস্ট মাসে রায়বাহাদুর নারায়ণ স্বামী মুদালিয়ারের প্রতিষ্ঠিত উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন।
১৮৮০ সালে তিনি প্রকাশ করেন সিলেটের প্রথম বাংলা সংবাদপত্র পরিদর্শন। এছাড়া তিনি ‘বেঙ্গল পাবলিক অপিনিয়ন’ (১৮৮৩), ‘নিউ ইন্ডিয়া’ (১৯০১), ‘বন্দেমাতরম’ (১৯০৬), ‘স্বরাজ’ (১৯০৮), ‘হিন্দু রিভিউ’ (১৯১২), ‘আলোচনা’ (১৯১৩), ‘ট্রিবিউন’, ‘সোনার বাংলা’ (১৩৩১ বাংলা), ‘ইনডিপেনডেন্ট’, ‘ডেমোক্রেট’, ‘ফ্রিডম ফেলোশিপ’, ‘ট্রিবুনি’, ‘জনশক্তি’ (১৯১৯) সহ অনেক পত্রিকায় সাংবাদিক ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। যৌবনের প্রথমদিকে কথাসাহিত্যের ভেতর দিয়ে তাঁর সাহিত্য জীবনের সূচনা হয়েছিল। তাঁর সৃষ্টির মধ্যে প্রবন্ধের সংখ্যা বেশি। তাছাড়া তিনি উপন্যাস, জীবনী, আত্মজীবনী, ইতিহাসও রচনা করেছেন। তাঁর ‘সত্তর বছর’ বইটি সেকালের সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের দলিল হিসেবে স্বীকৃত।
বিপিনচন্দ্র পালের প্রথম উপন্যাস ‘শোভনা’। এই উপন্যাসে তিনি ছদ্মনাম ‘হরিদাস ভারতী’ ব্যবহার করেছিলেন। ‘শোভনা’ নারীসমাজের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টির উদ্দেশ্য লিখিত একটি অসাধারণ উপন্যাস।
১৯৩২ সালের ২০ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
‘নর্থ ইস্ট নাও’ পরিবারের পক্ষ থেকে ভারত মাতার বীর সন্তানের চরণে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করা হলো।