৮৭ বছরের বৃদ্ধা অঞ্জলি মল্লিককে গত ২ সেপ্টেম্বর বউবাজারের ২/১বি, স্যাকরাপাড়া লেনের বাড়ি থেকে ধর্মতলা অঞ্চলের হোটেলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাঁর বাড়িতে যদিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, কিন্তু নিরাপত্তার জন্যে অঞ্জলি দেবীকে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো নির্মাণকারী সংস্থা কেএমআরসিএলের তরফ থেকে।
কিন্তু ৮৭ বছরের প্রৌড়া নিজের আলো বাতাসে পূর্ণ বাড়ি থেকে ধর্মতলার হোটেলের দমবন্ধ পরিবেশে কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারেননি। অসুস্থ হয়ে পড়েন। ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ বা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তালতলার হাসপাতালেই মঙ্গলবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
বুধবার তাঁর নশ্বরদেহ স্যাকরাপাড়া লেনের বাড়ির কাছে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু ভাঙাচোরা রাস্তায় মাকে বাড়িতে ঢোকানো সম্ভব হয়নি। বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে শববাহী গাড়ি দাঁড় করিয়েই মায়ের শেষ ইচ্ছে পূরণ করেন মেয়েরা।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জেরে এভাবেই কেউ প্রাণ হারাচ্ছেন, কেউবা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। একটি বাড়ি কেবলই একটি বাড়ি নয়, তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে বাড়ির মানুষের আবেগ, ভালবাসা সবকিছু জড়িয়ে থাকে।
অঞ্জলিদেবীর তিন মেয়ে। বাবার মৃত্যুর পর থেকেই তাঁরা মায়ের সঙ্গে প্রত্যেকে পনেরো দিন করে থাকতেন।
তাঁদের দাবী অনুযায়ী, হোটেলের সঙ্গীন অবস্থার জন্যেই মায়ের মৃত্যু ঘটেছে। অনীতা আঢ্য বলেন, ‘‘হোটেলের শৌচাগারের দুর্গন্ধ এমনই যে, সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়বে। মায়ের এত বয়স! ফলে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট।’’ তার পরেই, ৭ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় বৃদ্ধাকে। মঙ্গলবার গভীর রাতে সেখানেই মৃত্যু হয় অঞ্জলি দেবীর।
হোটেলবাসী অধিকাংশেরই এমন জেরবার অবস্থা। তাঁরা হোটেলে বিশুদ্ধ পানীয় জলটুকুও পাচ্ছেন না বলে দাবী জানাচ্ছেন। এমন চলতে থাকলে হোটেলে বসবাসকারীদের অবস্থা সঙ্গীন হয়ে উঠবে অল্পদিনের মধ্যেই!
কি ব্যবস্থা নেবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ? সে দিকে তাকিয়ে ভুক্তভোগি মানুষ।