করোনা তো একদিকে সংহারি রূপ নিয়েছেই পশ্চিমবঙ্গে। আরেকদিকে সুপার সাইক্লোন আমফানে থরথর কেঁপেছে বাংলা!
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। হাজার হাজার বাড়ি ভেঙেছে। ভেঙে পড়েছে অসংখ্য ব্রিজ। ভেসে গিয়েছে রাস্তা। অসংখ্য বাঁধ ভেঙেছে। জল ঢুকে গিয়েছে বহু জায়গায়। অন্ততপক্ষে ১২ জন মারা গিয়েছেন। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পানীয় জল পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ”কবে দুর্গত জায়গায় পৌঁছনো যাবে সেটাই বুঝতে পারছি না। চার-পাঁচ দিন লেগে যাবে কত ক্ষতি হয়েছে তা বুঝতে। আমি এখনও সব খবর পইনি।” এতখানি এলাকা জুড়ে এই ধরনের ধ্বংসলীলা এর আগে কবে হয়েছে তা মনে করতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরাও। লাখ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ রাতারাতি সর্বহারা হয়ে পড়েছেন।
২০মে’ নিজস্ব রুটে ভয়ানক চেহারা নিয়েছে সুন্দরবনের বুকে। রাক্ষুসে আমফান ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিবেগে সোনারপুরে এসে পৌঁছেছে আনুমানিক ৬ টা ৪০ মিনিটে। সেখান থেকে মেট্রোপলিটন বাইপাসের বহুতল ‘আরবানা’-য় ধাক্কা মারতে আর সময় নই না। সেখানে তখন টলিউডের সেলিব্রিটিদের ভিড়।
রাজ-শুভশ্রী, শ্রাবন্তী থেকে পায়েল সরকার, অরিন্দম শীল সকলেই রয়েছেন সেখানে।
পরিচালক-অভিনেতা অরিন্দম শীল আতংকের সুরে বলতে থাকেন “আমি ৪৪ তলায় থাকি। আমার উত্তর-দক্ষিণ-পশ্চিম খোলা। তাই পূর্ব গতির ঝড় আমার বাড়িতে তার চিহ্ন রেখে যায়নি। তবে পুব দিকে মুখ করা টাওয়ারের কয়েকটা বাড়িতে কাচ ভেঙেছে।আর আমরা তিন ঘণ্টা ধরে শুধু দুলেছি। আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট সারা ক্ষণ দুলেছে। প্রচুর গাছ পড়েছে। গাছের দিকটা কেমন শ্মশানের মতো দেখাচ্ছে!”
“মাথার উপর ছাদ, পর্যাপ্ত খাবার, যখন যা চাই তাই সামনে হাজির, ফিল্মস্টার বললেই এমনই এক ছবি ফুটে ওঠে চোখের সামনে। তাঁদের আবার কষ্ট কিসের? এ ধারণাই যখন আপামর জনগণের বিশ্বাসে তখনই আমপান কোথাও গিয়ে সমাজের সব শ্রেণির মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কাছে সবাই সমান।”
পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর বাড়িতেও ভয়ংকর অবস্থা। বলছেন, “প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। শুভ প্রেগন্যান্ট। সবাই প্যানিক করছি। চোখের সামনে কাচ ভাঙল!জল যে কোথা থেকে ঢুকছে বুঝতেই পারছি না। আর সব দুলছে। মাথা ঘুরছে সকলের।”
“শুধু মানুষ নয়, আমার পোষ্যগুলো ভয়ে কেমন কুঁকড়ে ছিল।” চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর সেই দৃশ্যের কথা জানাচ্ছেন শ্রাবন্তী।
অঙ্কুশ বলছিলেন, “মনে হচ্ছিল ভূমিকম্প হচ্ছে। ফ্ল্যাটের জানলার কাচ ভেঙে গেল হঠাৎ করে। জল ভেতরে আসতে লাগল প্রবল বেগে। বাথরুম থেকে ফলস সিলিং খসে পড়তে লাগল। মনে হল, এ যাত্রায় বুঝি আর রক্ষে নেই।”
প্রকৃতির এমন রুদ্ররুপ কবে দেখেছিল টলিপাড়া?
শুক্রবার বাংলার গোটা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্যে রাজ্যে উপস্থিত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কেন্দ্রের সরকারের তরফ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ১ হাজার কোটি টাকার আর্থ সাহায্য প্রদান করা হবে রাজ্যকে। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ে মৃতের আত্মীয়দের হাতে তুলে দেয়া হবে ২ লক্ষ টাকা এবং গুরুতর আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হবে। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে বিপর্যস্ত রাজ্যের মানুষের জন্যে দান করেছেন ৫০ লক্ষ টাকা।