“যে মানুষগুলোর মাথায় ছাদ নেই, ঘরে আলো নেই, পাতে খাবার নেই—তাঁরা জানতেও চান না, ত্রাণ নিয়ে যাঁরা পৌঁছেছেন তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় কী। অথচ তৃণমূলের অলিখিত নিদান, বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা ত্রাণ পৌঁছে দিতে পারবেন না। ত্রাণ দেওয়ার অধিকার শুধু শাসক দলের। তা সে যতই দুর্ভোগ হোক মানুষের। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার বিপর্যয় মোকাবিলা নিয়েও যে রাজনীতি করছে তাতে উমফানের থেকে বড় বিপর্যয় হতে চলেছে।”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে অভিযোগটা সরাসরি করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় ।
না, তৃণমূল শাসনতন্ত্রে বিরোধি দল বিজেপি চাইলেও যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতিই পর্যবেক্ষণ করতে পারবে না। ত্রাণ দিতে পারবে না।
মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় জানাচ্ছেন, রাজ্যে সেই ট্রেডিশন এখনো চলছে।
উল্লেখযোগ্য যে, সুপার সাইক্লোন আমফানে বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করার জন্যে যাচ্ছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
কিন্তু তাঁর পথ আটকানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশ-তৃণমূলের বিরুদ্ধে। রবিবার ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পূর্ব মেদিনীপুরের একাধিক এলাকা পরিদর্শনের সময় দিলীপ ঘোষকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে।
ঘূর্ণিঝড়ের পরদিনই ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে বারুইপুরের দিকে রওনার পথে গড়িয়ার কাছে ঢালাই ব্রিজে দিলীপ ঘোষের গাড়ি আটকে দিয়েছে পুলিশ। একই কায়দায় বনগাঁয় স্থানীয় সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের পথও আটকানো হয়। বিজেপির অভিযোগ, পুলিশ নানা অজুহাত দিয়ে পথ আটকাচ্ছে।পেছনে রয়েছে তৃণমূল।
এমনই অভিজ্ঞতা বুলবুলের সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়োরও হয়েছিল বলে তিনি জানান।
বাবুল বলেন “গত ৬ বছরে বাংলার রাজনীতিটা ভালরকম বুঝে গিয়েছি। আমি বরাবরই মনে করি, বিরোধীরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, তাঁরা শত্রু নন। তাই ব্যক্তিগত সম্পর্কে সৌজন্য দেখানোই দস্তুর। কিন্তু এখন ঠিক করেছি, যাঁরা মানুষের উপর অত্যাচার করে, তাঁদের কাছে ত্রাণ পৌঁছতে দেয় না, তাঁদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়ও আর করব না।”
তাঁর আরো অভিযোগ, “নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রাক্তন মন্ত্রী হিসাবে জানি, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাংলার জন্য কত টাকা বরাদ্দ হয়েছিল গত কয়েক বছরে। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনাতেই বা কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সে টাকা ঠিক ভাবে কাজে লাগলে গ্রামের সব মানুষের এতোদিনে পাকা বাড়ি হয়ে যেত। সাইক্লোনে কাঁচা বাড়ি ভাঙত না কারও। ফলে ত্রাণ ও উদ্ধারের জন্য কেন্দ্র যে ১ হাজার কোটি টাকা অগ্রিম বরাদ্দ করেছে তার মধ্যে ২০০ কোটি টাকাও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছবে কিনা সন্দেহ!”
উল্লেখযোগ্য যে, যতদূর-যেদিকে তাকানো যায়, প্রকৃতির রুদ্ররূপ গোটা সুন্দরবন জুড়ে। নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে একে একে গ্রামগুলো। নুন আনতে পান্তা ফুরনো মানুষগুলোর বাসস্থানটুকুও নিশ্চিহ্ণ হয়ে গেছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোন ক্ষতিপূরণ এসে পৌঁছয়নি, পৌঁছয়না!
আয়লা, বুলবুলের সেই ক্ষত তো এখনো তো এখনো দ্গদগে। এবার মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এলো আমফান! কেমন আছেন সুন্দরবনের মৎস্যজীবীরা?
সুপার সাইক্লোন আমফানের পরবর্তী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্যে দক্ষিণ ২৪ পরগণা, কাকদ্বীপ গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেবল তাই নয়, কাকদ্বীপে প্রশাসনিক বৈঠকও করেছেন। বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়া মানুষগুলোর জন্যে ক্ষতিপূরণের ঘোষণাও করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও কী স্বস্তিতে ঘুমোতে পারছেন সুন্দরবনের মৎস্যজীবীরা?
আসলে মুখ্যমন্ত্রীর প্রচুর প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলেও দুঃস্থ মানুষগুলোর মনে জন্ম নিচ্ছে দিনের পর দিন অভিযোগ, হাহাকার! সরকারের প্রতিশ্রুতি শোনা এখন তাঁদের কাছে রূপকথার সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যে মানুষগুলোকে প্রতিবছর বন্যা, দুর্যোগ ভাসিয়ে নেয়। মাথা তুলে দাঁড়াতে চায় গলা সমান জল থেকে, আঘাতটা তখনই ফের আসে। তাই এখন আর কোন প্রতিশ্রুতি তাঁদের আশ্বস্ত করতে পারে না।
আমফানের পর নদীয়া থেকে সোনারপুর একই চিত্র দেখা যাচ্ছে এখনো অবধি। বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। করোনার মাঝে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে স্থানীয় থানার সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন উত্তেজিত জনতা।
একের পর এক প্রতিশ্রুতি, কিন্তু আসেনি বিদ্যুৎ! সামাজিক দুরত্ব ভেঙে জনগণ বাধ্য হচ্ছেন বিক্ষোভ করতে। চরম ভোগান্তিতে পশ্চিমবঙ্গের আমজনতা।