একদিকে করোনা ভাইরাসের সংহারি রূপ, অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডব পশ্চিমবঙ্গের কেড়ে নিয়েছে ৭২ জনের প্রাণ! নির্মম হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি। বৃহস্পতিবার নবান্নে এমনটাই জানিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
এদিকে সুপার সাইক্লোন আমফান মরার উপর খাঁড়ার ঘা দিয়েছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যে লকডাউনে বর্তমানে কিছু শিথিলতা আনলেও দোকান খোলার নিয়ম বেঁধে দেয়া হয়েছে। কলকাতা কলেজ স্ট্রিট চত্বরে যারা বই বিক্রি করে পেট চালান, তাঁদের দু-মাস ধরে বিক্রি বন্ধ। অবস্থা এমনিতেই বড় নাজেহাল।
এমন পরিস্থিতিতে রাক্ষুসে আমফানের তাণ্ডবে ভেসে গেছে কলেজস্ট্রিটের বহু দোকান। বইপাড়া জলে জলাকার। রাস্তার একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ভেসে গেছে বই। অবশিষ্ট আর কিছু নেই। বিধ্বংসী ঝড়ে ভেঙে গিয়েছে দোকানপাট। রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে সহায়িকা, প্রশ্নবিচিত্রা, গল্পের বই, থেকে শুরু করে দুষ্প্রাপ্য প্রচুর বই।
ফুটপাথে পসার সাজিয়ে বসা বই বিক্রেতাদের মাথায় হাত পড়েছে। করোনা একদিকে বিধ্বস্ত করে ফেলছে জনগণকে, তবুও যতটুকু সম্বল ছিল বইগুলো বিক্রেতাদের, সেগুলোও আর কিছুই বেঁচে নেই। চোখে জল বিক্রেতাদের। আফশোস বইপ্রেমীদের! এমন ভয়ংকর দুর্যোগ কলকাতা এর আগে প্রত্যক্ষ করেনি।
বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে সংসার চালানো ভয়ানক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। অনেকের আর নতুন করে দোকান দেয়ার ক্ষমতাও নেই। বহু বিক্রেতা আবার সব ছেড়ে গালামাল দোকান দেয়ার কথা চিন্তাভাবনা করছেন!
অন্বেষা পত্রিকা ও প্রকাশনের সম্পাদক শিবুবাবু জানাচ্ছেন, বহু লক্ষ টাকার বই শুধুমাত্র অন্বেষার গোডাউনেই নষ্ট হয়ে গেছে। রাক্ষুসে ঝড়ের প্রলয় জানালা ভেঙে ফেলে। ফলে জলে ভিজে একাকার হয়েছে সমস্ত বই। বই সরানোর সমটুকুও পাননি তাঁরা! ঝড়ের পর তিলোত্তমাকে চেনা যাচ্ছে না।
রাজ্য সরকারের প্রতি তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আমরা জানি সরকারের কোনপ্রকার সাহায্য আমাদের মতো সংস্থাকে দেয়া হবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোন সুস্পষ্ট নজর নেই এদিকে। তাই আমরা বইপ্রেমীদের অনুরোধ জানাচ্ছি, তাঁরা যেন যথাসাধ্য আমাদের পাশে দাঁড়ান। কলকাতা আবার ফিরে আসুক আগের ছন্দে।”