পশ্চিমবাংলার পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে ভয়াবহ । রাজনৈতিক দিক দিয়ে বরাবরই সে রাজ্যে রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটেই থাকে ! কিন্তু এবার রাজ্য জুড়ে সরকারি হাসপাতালের জুনিওর চিকিৎসকদের যে ক্ষোভের আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে অসমর্থ রাজ্য সরকার । আর তাই কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার আবেদন জানিয়েছেন ।
দীর্ঘ ৬০ ঘন্টা হয়ে গেল , জুনিওর ডাক্তাররা তাঁদের কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন । জুনিওর চিকিৎসকদের দেয়া হচ্ছে না কোন নিরাপত্তা, আর তাই তাঁদের ওপর বারংবার হামলা চালানো হচ্ছে । সেই নিরাপত্তা ফিরিয়ে দেবার আশ্বাস মমতা দিদি বহুবার দিয়েছেন, কিন্তু সে নিরাপত্তার আশায় বালিচাপা পড়ছে । আইন রয়েছে খাতায়-কলমে। প্রয়োগের নামগন্ধ নেই!
গত আগস্ট মাসেও ডাক্তার-সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিকিৎসকদের দাবি, তখনও তিনি বলেছিলেন, ডাক্তার-নিগ্রহের ঘটনা ঘটলেই সর্বোচ্চ পর্যায়ে হস্তক্ষেপ করা হবে। এবং জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা হবে। রাজ্যে তার পরেও নিগ্রহ করা হয়েছে চিকিৎসকদের ।
যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী লোকসভা নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে ধুম বক্তৃতা দিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীর গালে দু-চড় মারার কথা বলতে পারেন অনায়াসে , এমনকি তুই সম্বোধন করে মোদির উদ্দেশ্যে এমনও বলেছেন ‘আগে গুজরাট সামলা, তারপর বাংলা’ !
দেশের প্রধানমন্ত্রীর থেকেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়ের কাজ বেশি উল্লেখ করেছেন তাঁর চিরাচরিত ভঙ্গিমায় । সে রাজ্যের রূপই এমন ভয়াবহ হয়ে উঠেছে !
রোগিসহ রোগিদের পরিবার বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে । বুধবার বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারালেন শিখা গোমস্তা (৪০) নামের এক মহিলা । মেদিনীপুরে মারা গেছেন অশোক হাজরা এবং ব্রজেন দণ্ডপাট।
কেউ মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে প্রায় নেতিয়ে পড়েছে ।
মুমূর্ষু শিশুকে কোলে নিয়ে মায়ের আর্তি শোনা যাচ্ছে ‘‘ডাক্তারদের মারা অন্যায় হয়েছে। কিন্তু আমার বাচ্চাটার কী দোষ?
এ কোন কলকাতা ! এ কোন পশ্চিমবংগ ! সারা থাকল সারা বিশ্ব !
মুর্শিদাবাদের রানিনগরের বছর দুয়েকের একটি শিশু প্রবল শ্বাসকষ্টে ভুগলেও কোনও ওষুধ জোটেনি তার।
বুধবার ভোরেই পরিজনেরা তাকে নিয়ে পিজি-তে এসে পৌঁছলেও বিকেল পর্যন্ত মেলেনি চিকিৎসা।
অগত্যা জরুরি বিভাগের সামনে অচৈতন্য মেয়েকে কোলে শুইয়ে চোখের জল মুছে মা সাদেয়া বিবি বললেন, ‘‘ডাক্তারদের মারা অন্যায় হয়েছে। কিন্তু আমার বাচ্চাটার কী দোষ?
হাত জোড় করে কান্নাকাটি করেও সন্তানের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে না পেরে শেষমেশ ক্লান্ত শিশুকে কোলে তুলে বাড়ির পথেই পা বাড়ালেন বাবা-মায়েরা।
মায়েদের করুণ আবেদন কলকাতার আকাশ-বাতাসে ভাসছে “ডাক্তারবাবুদের কাছে অনুরোধ আমার মতো অনেক মা সন্তানদের চিকিৎসা করাতে না পেরে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দয়া করে একটু সদয় হোন।’’