জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যায় সরাসরি জড়িত ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের (৭২) ফাঁসি ১১ এপ্রিল কার্যকর করা হয়েছে।
আব্দুল মাজেদের সম্বন্ধে সাংঘাতিক কিছু গোপন তথ্য জানা যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর খুনি কলকাতায় লুকিয়ে ছিলেন দীর্ঘ ২৩ বছর।
তবে তিনি শুধু লুকিয়েই ছিল এমন নয়। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ফোনে যোগাযোগ রাখতেন। নিয়ম করে দুটো নম্বরে ফোন করতেন মাজেদ।
কলকাতায় প্রকাশিত ‘দৈনিক বর্তমান প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তড়িঘড়ি করে দেশ ছেড়েছিলেন মাজেদ। ওই সময় প্রথমে ভারত হয়ে লিবিয়া, পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানে যান তিনি। কিন্তু সুবিধা করতে না পারায় সেখান থেকে পুনরায় কলকাতায় চলে আসেন। ভারতের গোয়েন্দারা মনে করছেন, কলকাতার কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির সাহায্য পেয়েছিলেন মাজেদ। এ কারণে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে ফেলেছিলেন। পার্ক স্ট্রিটের ভাড়াবাড়ি থেকে সেই পাসপোর্টও উদ্ধার করেছে পুলিশ। যথাযথ নিয়ম মেনেই পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছিল- কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের এমন বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে আলী আহমেদ নামে ভারতীয় পাসপোর্ট পান মাজেদ। যথাযথ নিয়ম মেনে পার্ক স্ট্রিট থানা পুলিশ ভেরিফিকেশন করার পরই পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। পাসপোর্টে জন্মস্থান হিসেবে হাওড়া উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণের সব কাগজপত্রই ছিল মাজেদের। আধার কার্ডও বানিয়েছিলেন তিনি। তার আধার কার্ড নম্বর ৭৯৪১ ৯৫৯১ ২৮৬৪। এর আগে ২০১২ সালে সচিত্র ভোটার কার্ড পেয়েছিলেন মাজেদ।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের অনুমানের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে মাজেদের পরিবারের সদস্যদের ফোনে নিয়মিত আড়ি পাতত দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা। একপর্যায়ে তারা জানতে পারে +৮৮০১৫৫২৩৮৭৯১৩ এবং +৮৮০১৭১১১৮৬২৩৯ নম্বরে নিয়মিত যোগাযোগ করেন মাজেদ। ফলে মাজেদের অবস্থান সম্পর্কে জেনে যায় তারা। উদ্যোগ নেয় মাজেদকে গ্রেফতারের। হয়তো কলকাতায় মাজেদের অবস্থান জানতে ভারতের কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য নেয় তারা। যদিও এ নিয়ে কোনো সরকারই মুখ খোলেনি। তবে তদন্তে জানা গেছে, কলকাতায় মাজেদ যে দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন, তার একটিও নিজের নামে ছিল না। তিনি স্ত্রী সেলিনা বেগমের নামে সিমকার্ড কিনেছিলেন। মাজেদের স্ত্রী সেলিনা ওরফে জরিনা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে চলতেন মাজেদ। এমনকি খেতে দিতে সামান্য দেরি হলে রেগে আগুন হয়ে যেতেন তিনি। সুদের কারবার ও টিউশনির টাকায় সংসার চললেও সম্প্রতি তালতলা এলাকায় ২৫ লাখ টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাটের বুকিং দিয়েছিলেন। তবে গোয়েন্দারা মনে করছেন, সম্ভবত বাংলাদেশ থেকে টাকা আসত মাজেদের কাছে। মাজেদ নিখোঁজ রহস্যের তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হয়েছেন, ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা ৪ মিনিটে বেডফোর্ড লেনের বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তাকে কেউ জোর করে অপহরণ করেনি। তেমন হলে চিৎকার কিংবা ধস্তাধস্তির প্রমাণ থাকত। এ ছাড়া একজন হলেও প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যেত। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের বাস স্টপেজ থেকে পিজি হাসপাতাল পর্যন্ত কোথাও বাস থেকে নামতে দেখা যায়নি আবদুল মাজেদকে। মাজেদের মোবাইলের সর্বশেষ টাওয়ার লোকেশন ছিল মালদহ। গোয়েন্দাদের অনুমান, মাজেদ ঘুরপথে গিয়েছিলেন হাওড়া স্টেশনে। সেখান থেকে ট্রেনে প্রথমে গোয়াহাটি এবং পরে শিলং হয়ে ডাওকি সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ যান। ট্রেন মালদহ স্টেশনের আশপাশে থাকাকালীন তিনি তার মোবাইলটি একবার অন করেছিলেন।