অপরাজেয় প্রতিবাদী মুখ মহাশ্বেতা দেবী একটি যুগ, একটি বিস্ময়! অন্তরের বন্ধ কপাট খোলে বংগবিভূষিতা কথাসাহিত্যিকের রচনায়। তাঁর আঁচলের তলায় সান্ত্বনা লাভ করেছে কত শত গৃহহীন নর-নারী।
আজ ২৮শে জুলাই, মহাশ্বেতা দেবীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৬ সালের আজকের দিনে সকলের বুক ভেঙে তিনি চলে গেলেন পরপারে! একদিকে চোখের জল, অপরদিকে মহাশ্বেতার মন্ত্র। দুয়ে মিলে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে বুকে দৃঢ় আশা নিয়ে স্মরণ করছি আমাদের দেবীকে।
ছোটগল্পকার মহাশ্বেতা দেবীর মৃত্যুদিবসে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রবাদপ্রতিম লেখিকা মহাশ্বেতা দেবীর মৃত্যুদিবসে আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি। ওনার অনুপস্থিতি আমরা খুব অনুভব করি। আজকের এই কঠিন সময়ে ওনার দীপ্ত প্রতিবাদের ভাষাকে খুব দরকার ছিল
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) July 28, 2019
মানবাধিকার আন্দোলনকর্মী মহাশ্বেতা সকলের মাঝে খুঁজে পেয়েছিলেন নিজের জীবনকে। জগতের দুঃখকে তিনি আপন করে নেবার মধ্যেই তৃপ্তি পেতেন। শুধু আপন করে নেয়া বললেও ভুল হবে। সে দুঃখের গণ্ডি থেকে কিভাবে নিজেকে মুক্ত করতে হবে, সে পথও তিনি বাতলে দিয়েছেন।
লাভ করেছেন বহু সম্মান। ‘সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার’ (বাংলায়), ‘জ্ঞানপীঠ পুরস্কার’ ও ‘র্যামন ম্যাগসাইসাই’ পুরস্কার সহ একাধিক সাহিত্য পুরস্কার এবং ভারতের চতুর্থ ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান যথাক্রমে ‘পদ্মশ্রী’ এবং ‘পদ্মবিভূষণ’ লাভ করেছেন। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে লাভ করেন পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘বংগবিভূষণ’।
তেজস্বী মহাশ্বেতা দেবীর ১৯৭০ এর দশকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ‘নকশাল আন্দোলন’ নিয়ে সৃষ্ট ‘হাজার চুরাশির মা’ এর ব্রতী আমাদের জীবনে ব্রত পালন করতে শেখায়।
ছেলে ব্রতী ও মা সুজাতা মিলে একাকার সারা উপন্যাসে।হৃদপিণ্ডে ঢেউ তোলে এই উপন্যাস।
লাশকাটা ঘরে ব্রতীর নম্বর ছিল ১০৮৪। সুজাতা, আধুনিক কঠোর মানসিকতাসম্পন্ন ব্রতীর মা। যিনি নিজেও কঠোর জীবনের ব্রত নিয়েছেন, এবং ছেলেকেও শিখিয়েছেন শক্ত জীবনের ব্রত গ্রহণ করতে।
ব্রতীর মতো ছেলেদের সমাজ-সংসারে হেয় বলে গণ্য করে চরিত্রহীন বাবা দিব্যনাথের মতো লোকেরা। কিন্তু লেখিকা দেখিয়েছেন ব্রতীরা মারা যায় না। যুগে যুগে তারা ফিরে আসে ভিন্ন ভিন্ন রূপে।
ঔপন্যাসিক মহাশ্বেতা রচিত ‘অরণ্যের অধিকার’ শেখায় লড়াই করে বেঁচে থাকার মন্ত্র।
পৃথিবীর প্রতি কোণায়,মানুষের রক্তে রক্তে রয়েছেন মহাশ্বেতা দেবী। শুধু বাঙালি নয়, তিনি সারা বিশ্বের মানুষের কাছে পরিচিত একজন কঠোর অথচ দরদী মা হিসেবে। যিনি সময়ে ক্ষমা করতে জানেন, আবার সময়ে খড়্গহস্ত হতেও ভুলে যান না।
সমাজের দরিদ্র, অসহায় অথচ যাঁদের অন্তরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবার জন্যে জ্বলছে আগুন, মহাশ্বেতার উপন্যাসের চরিত্র তাঁরাই।
প্রতিশোধের জন্যে অক্সিজেন আছে মনে, অথচ প্রয়োজন বাইরের একটু আগুনের, সেই আগুন হচ্ছে মহাশ্বেতা দেবীর এক একটি সৃষ্টি।