আগরতলা: নানা ইস্যুতে আবারো ত্রিপুরা (Tripura) সরকারের সমালোচনায় মুখর রাজ্য মন্ত্রিসভার প্রাক্তন মন্ত্রী এবং বর্তমানে বিরোধী দলের বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন। বুধবার আগরতলার প্রদেশ কংগ্রেস ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তিনি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন।
প্রথম অভিযোগটি করেন সারা দেশের সঙ্গে ত্রিপুরা রাজ্য (Tripura) জুড়ে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালনকে নিয়ে। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য এই উৎসবের নামে সারা রাজ্যজুড়ে হাজার হাজার ফ্লাক্স ও ফেস্টুন লাগানো হয়েছে, অথচ একটি ফ্লাক্স এবং ফেস্টুনে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কোন ছবি নেই।
এগুলোতে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ত্রিপুরা রাজ্যের (Tripura) মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে নেতা-মন্ত্রীদের ছবি লাগানো ছিল। অথচ চাইলে এইসব প্রচার সামগ্রী দিয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ইতিহাস তুলে ধরা যেত।
রাজধানী আগরতলা শহর রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মূর্তি রয়েছে এগুলোতে এই উৎসব উপলক্ষে একটিও ফুলের মালা দেওয়া হয়নি বলে সুদীপ রায় বর্মন অভিযোগ করেন। তিন দিনের এই উৎসবে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, অথচ এই অনুষ্ঠান গুলিতে ত্রিপুরা রাজ্যের যে সকল স্বাধীনতা সংগ্রামী এখনো বেঁচে আছেন তাদের সংবর্ধিত করা হয়নি, বা তাদের পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধিত যেমন করা হয়নি তেমনি যে সকল স্বাধীনতা সংগ্রামী আর আমাদের মধ্যে নেই তাদের ব্যবহৃত সামগ্রী দিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা যেত কিন্তু তা করা হয়নি।
পাশাপাশি সুদীপ রায় বর্মন আরো অভিযোগ করেন, রাজ্যে স্বাধীনতা দিবসের মূল অনুষ্ঠান মঞ্চ আসাম রাইফেল ময়দান থেকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে নতুন কোন কিছু নেই।
রাজ্যের উন্নয়নের জন্য সরকারের আগামী দিনের পরিকল্পনার কোন ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি বলেও তার অভিযোগ। এদিন মুখ্যমন্ত্রী যে কথাগুলো বলেছেন তার বক্তৃতায়, অন্যান্য নেতা মন্ত্রীদের মুখে মানুষ শুনতে পেয়েছেন।
স্বাধীনতা দিবসের রাতে ত্রিপুরা পুলিশের প্রধান কার্যালয় থেকে ১০০টির বেশি গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ ফাইল চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সুদীপ রায় বর্মন। যদি রাজ্যের পুলিশের প্রধান কার্যালয় থেকে গুরুত্বপূর্ণ নথি চুরি হয়ে যায় রাজ্যে সাধারন মানুষের স্বাধীনতা যে মিথ্যা তা প্রমাণিত হয়।
পরবর্তী সময়ে চুরি যাওয়া ফাইলের কয়েকটি উদ্ধার হয়েছে। তার প্রশ্ন বাকি গুলির কি হলো তাহলে। এরপর তিনি আবার বলেন আসলে ফাইলগুলি চুরি হয়নি, কিছু মানুষদের বাঁচানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ফাইল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পুলিশের প্রধান কার্যালয় থেকে রাস্তার চোর এভাবে এসে ফাইল চুরি করবে তা কল্পনা করা যায় না।
গুরুত্বপূর্ণ ফাইল চুরি প্রসঙ্গে সুদীপ রায় বর্মনের দাবি এই ঘটনার তদন্ত ত্রিপুরা হাইকোর্টের একজন সিটিং বিচারপতিকে দিয়ে করানো হোক। তাহলে প্রকৃত সত্যটা উঠে আসবে।এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের তরফে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় যদি সরকার কোন পদক্ষেপ না গ্রহণ করে তাহলে তারা কি আদালতের দারস্থ হবেন?
এর উত্তরে তিনি জানান তারা আপাতত সরকারের দিকে চেয়ে আছেন কি পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা দেখার জন্য। যদি সরকার কোন পদক্ষেপ না নে তাহলে পরবর্তী সময় চিন্তা ভাবনা করবেন তারা।
সম্প্রতি সুদীপ রায় বর্মনের উপর প্রকাশ্য ও দিনের বেলা হামলার ঘটনা ঘটেছে, এই প্রসঙ্গে তিনি জানান বর্তমান সরকারের সময় তার উপর সাতবার প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে তিনবার তিনি গুরুতর ভাবে জখম হয়েছেন।
বাকিগুলিতে তার নিরাপত্তা রক্ষী গাড়ি ইত্যাদি ভাঙচুর করা হয়েছে। এধরনের ঘটনা ঘটলেও তার উপর এখন পর্যন্ত কোন আক্রমণ করে ধরা পড়েনি বলে অভিযোগ। আক্রমণকারীরা ধরা পড়া তো দূরের কথা, এই ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে নিন্দা পর্যন্ত জানাননি। এর ফলে দুষ্কৃতীরা আরো বেশি উৎসাহিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।