আগরতলা: সোমবার ১৫ই আগস্ট সারা ভারতের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সমগ্র ত্রিপুরা জুড়ে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে উদযাপিত হল ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবস। এদিন রাজ্যের মূল অনুষ্ঠানটি হয় রাজধানী আগরতলার আসাম রাইফেলস ময়দানে।
এখানে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা মানিক সাহা। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে এই অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
তখন মাঠের এক প্রান্তে ত্রিপুরা পুলিশ, টি এস আর, আসাম রাইফেলস, বিএসএফ, ফরেস্ট গার্ড আরো কিছু আধা সামরিক বাহিনীর এবং বেসামরিক বাহিনীর তরফে এনসিসি, কাউটস এন্ড গাইড সহ অন্যান্য বাহিনী মিলে মোট ১৪ টি প্লেটন দাঁড়িয়েছিল।
পতাকা উত্তোলনের পর মুখ্যমন্ত্রী হুড খোলা গাড়িতে করে মাঠ প্রদক্ষিণ করেন। এরপর মাঠে উপস্থিত বিভিন্ন বাহিনীর তরফে মুখ্যমন্ত্রীকে সশস্ত্র সালামি জানানো হয়। এরপর মুখ্যমন্ত্রী সশস্ত্র সালামিত অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন বাহিনীর কমান্ডারদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
পুরস্কার বিতরণ শেষে মাঠ থেকে রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তব্য পেশ করেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে এসেছে বর্তমান সময়ে রাজ্যের উন্নয়ন থেকে সরকারের আগামী দিনের নানা পরিকল্পনার কথা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন নীতি আয়োগের রিপোর্ট অনুসারে উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ত্রিপুরা রাজ্য এখন দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে।
সরকার রাজ্যবাসী সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কর্মচারীদের জন্য এবছর মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করেছে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যে শূন্য পদ রয়েছে এগুলো পূরণের জন্য পরিকল্পনা নিয়েছে।
এর ফলে আগামী দিনে রাজ্যের বেকারদের নতুন করে কর্মসংস্থান হবে। রাজ্যের কৃষি উন্নয়নের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, দুই লাখের বেশি কৃষক প্রধানমন্ত্রীর কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পে সুবিধা পাচ্ছেন।
রাজ্যের দুধ মাংস এবং ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফুল চাষ সহ অন্যান্য চাষের জন্য সহায়তা করা হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যে শিক্ষার মান উন্নয়ন করা এবং গ্রামীণ ও জনজাতি এলাকায় শিক্ষাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ১৬টি একলব্য স্কুল স্থাপন করা হচ্ছে।
ছাত্রীদের সুবিধার জন্য নতুন নতুন হোস্টেল স্থাপন করা হচ্ছে। রাজ্যে একটি ডেন্টাল কলেজ, আগরতলা একটি ইংরেজি মাধ্যম কলেজ স্থাপন করা হবে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে রাজ্যের রাবার মিশনের মাধ্যমে নতুন করে ৫০০০ হেক্টর জমিতে রাবার বাগান গড়ে তোলা হবে।
তার এ দিনের বক্তব্যে উঠে আসে আগরতলা আখাউড়া রেল যোগাযোগের বিষয়টিও। তিনি জানান এই রেলপথের ভারতীয় অংশের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। জুন মাসের মধ্যে ভারতীয় অংশের কাজ শেষ হবে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। রাজ্যের দক্ষিণ জেলার সাবরুমের নির্মীয়মান স্পেশাল ইকোনমিক জোনের কাজ শেষ হয়ে গেলে সরাসরি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে আমদানি রপ্তানি শুরু হবে।
এর ফলে আর্থিকভাবে লাভবান হবে রাজ্য। স্বাস্থ্যপরিসেবার উন্নয়নের বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখন ত্রিপুরা রাজ্যে অনেক বড় এবং জটিল অস্ত্রপাচার ও চিকিৎসা হচ্ছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য কাজ করতে রাজ্য সরকার।
রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে আর্থিক উন্নয়নের বিষয় উঠে আসে মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বক্তব্যে। এদিন অনুষ্ঠান মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা সরকারের মন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল রাজ্য প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা। শেষ পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এতে বিভিন্ন স্কুল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা নাচ এবং গান পরিবেশন করেন। আগরতলার পাশাপাশি রাজ্যের প্রতিটি জেলা এবং মহকুমাতেও স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।