২০২৯ সালের ডিসেম্বর মাসে করোনাভাইরাস রোগ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পরই সন্দেহের আঙুল উঠেছে এক জন্তু প্রজাতি বাদুড়ের দিকে।
ডানা থাকা নিশাচর-স্তন্যপায়ী প্রাণীটি কখনো সত্যিই প্রশংসা পায়নি। ব্যতিক্রম ধরুন বেট্ম্যান।
তবু কোভিড-১৯ এ বাদুড়ের প্রতি ফের মানুষের নিকৃষ্টতম ভাবনাটি বেরিয়ে এসেছে।
কোভিড-১৯ এর কারণ SARS-COV-2 বলে অনেকে সন্দেহ করে বাদুড়ের বাসাগুলো ভাঙার এমনকি তাঁদের মেরে ফেলারও পরামর্শ দিচ্ছে।
মানুষ যখন করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে আসে, এটি সাধারণত সংক্রমিত জন্তুর সঙ্গে সম্পর্ক থেকে ঘটে।
সবচেয়ে সাধারণ বাহক হলো বাদুড়, যদিও তারা সাধারণত সরাসরিভাবে করোনাভাইরাস সঞ্চারিত করেনা।
তার পরিবর্তে এই সংক্রমণ মধ্যবর্তী এক জন্তুর মাধ্যমে সংঘটিত হতে পারে, যা সাধারণত, কিন্তু সবসময় নয়, হলো এক পোষা জন্তু।
নতুন করোনা ভাইরাসটির ক্ষেত্রে চিনের প্রারম্ভিক প্রতিবেদনগুলো এই প্রাদুর্ভাবকে মধ্য উহানের সাগরীয় খাদ্য বাজারের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলেছিল।
ফলে, স্থানীয় কৰ্তৃপক্ষ বাজারটি ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বন্ধ করে দিয়েছিল।
অবশ্য পরের মূল্যায়ণ প্রকাশ করেছে যে, বাদুড় করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মূল উৎস হওয়ার সম্ভাবনা নেই, কারণ প্রথম অবস্থায় এই ভাইরাস থাকা কিছু মানুষের এর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না।
বিশেষজ্ঞরা এখনো অবধি উক্ত ভাইরাসের সঠিক উৎস নির্ধারণ করতে সক্ষম হননি।
একমাত্র সেজন্যে, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের জন্যে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বাদুড়গুলো আমাদের ঘৃণার লক্ষ্য হওয়া উচিৎ নয়।
বাদুড়কে শতকজুড়ে অশুভ এবং পিশাচসদৃশ বলা হয়ে থাকে। সম্ভবত তাদের গোল, উজ্জ্বল চোখ এবং ক্ষুরের মতো দাঁতের জন্যেই।
প্রত্যেক আতংকময় হরোর ছবি বা উপন্যাসে বাদুড় সেজন্যে ভয়ের প্রতীক হয়ে এসেছে।
কিন্তু চোখে দেখার থেকেও আকর্ষণীয় দিক আছে এই নিশাচর প্রাণীটির।
পৃথিবীতে বাদুড়ের ১৩০০ রও অধিক প্রজাতি আছে, যা একে ইঁদুরজাতীয় প্রাণীর পর দ্বিতীয় সবথেকে সুলভ স্তন্যপায়ীতে পরিণত করেছে।
কোনগুলোর ওজোন এক পেনি থেকে কম, আবার কোনটার ডানার পরিধি ৬ ফুট, কিন্তু সবথেকে চিত্তাকর্ষক তাদের পরিস্থিতি তন্ত্রের অত্যাবশ্যকীয় সদস্য।
প্রধানত ২ ধরনের বাদুড় আছে; মাইক্রোবেটস এবং মেগাবেটস। অধিকাংশ বাদুড় মাইক্রোবেটস, তারা কীট পতঙ্গ খায়, রাতে বের হয়।
ভ্যাম্পায়ার বাদুড় একমাত্র মাইক্রোবেটস যা কীটের বাইরেও রক্ত খায়। কিন্তু চিন্তার কারণ নেই, তারা মানুষ নয়, গরু, মোষ ঘোড়ার রক্ত পান করতে পছন্দ করে।
বাদুড় নিয়ে আমাদের মধ্যে এতো ভুল ধারণা রয়েছে। কিন্তু তারা পরিবেশের জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
পতঙ্গ খাওয়া বাদুড় একরাতে নিযুত কিট ভক্ষণ করে। একটি বাদুড় একঘন্টায় ৬০০ পর্যন্ত মশা খেতে পারে। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে বাদুড় প্রাকৃতিক কীট নিয়ন্ত্রকের কাজ করে।
ফুলের রেণু খাওয়া বাদুড় উদ্ভিদের পরাগ সংযোগে সাহায্য করে।
বাস্তবে আম, কলা এবং এভোকেডোর পাশাপাশি ৫০০রও বেশি উদ্ভিদ প্রজাতি পরাগ সংযোগে বাদুড়ের ওপর নির্ভরশীল।
ইটালি, স্পেন, মাদাগাস্কার, থাইল্যাণ্ড এবং ফিলিপাইনসে হওয়া অধ্যয়নে প্রমাণিত হয়েছে যে ধানের কীট গোগ্রাসে খাওয়া কীট ভক্ষণকারী বাদুড় কীট নিয়ন্ত্রণের মূল্যবান এজেন্ট।
সন্দেহ নেই, তারা ভারত-দক্ষিণ এশিয়াতেও একই কাজ করে।
অন্যতম সর্বাধিক আকর্ষণীয় এই প্রজাতির সংরক্ষণের জন্যে এমন এক অনন্য উদ্যান পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায়নি এবং সেই উদ্যানটি রয়েছে ভারতের ত্রিপুরায়।
ত্রিপুরার পর্যটন বিভাগ এবং রাজ্যিক বন বিভাগ এটি রাজধানী আগরতলা থেকে প্রায় ৫৫কিমি দূরে গোমতি জেলার বাগমাতে এক “বেট ভিউপইণ্ট” স্থাপন করেছে।
বাদুড়্গুলো পরিস্থিতিতন্ত্রের সন্তুলন এবং পরিবেশ ধরে রাখার জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার জন্যে রাজ্য সরকার এই বাদুড়গুলো বাঁচানো এবং এক পর্যটনক্ষেত্র হিসেবে এই স্থানকে বিকশিত করার জন্যেও উদ্যোগ নিয়েছে।
এই ভিউপয়েন্টটি ২০১৯ সালের মে’মাসে স্থাপন করা হয়েছিল।
বর্তমানে প্রায় ৪০-৫০ ঝোপা Andaman padauk গাছে প্রায় ৫ হাজার বাদুড় আশ্রয় নিয়েছে।
এই উদ্যানে থাকা বেশিরভাগ বাদুড় ‘Indian flying foxes’ নামে পরিচিত।
শংখ শুভ্ৰ দেববৰ্মন আঞ্চলিক সঞ্চালক, উত্তর-পূর্ব ভারত, পৰ্য্যটন বিভাগ, ভারত সরকার