কলকাতা কি ইসলামিক সন্ত্রাসবাদীদের শেষ এবং নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে? অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি রেখেছেন মেঘালয়ের সাবেক রাজ্যপাল তথাগত রায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তথাগতবাবুর উক্ত মন্তব্য চারদিকে সাড়া ফেলে দিয়েছে।
Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman and his family's assassin ABDUL MAJED nabbed at Dhaka 45 years after the crime.
Says he lay hidden for 23 years at KOLKATA!
Is my city the last and safest refuge of every Islamic terrorist?
Is Maulana Saad of Tablighi Jamaat also hiding here?
— Tathagata Roy (@tathagata2) April 8, 2020
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এবং তাঁর পরিবারের খুনি আবদুল মাজেদকে ৬ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঢাকার মিরপুর থেকে। বিভিন্ন আইনী জটিলতায় দীর্ঘ ৪৫ বছর পর তাঁকে গ্রেফতার করা সক্ষম হয়েছে।
মার্চের মাঝামাঝি তিনি ঢাকায় ফিরেছিলেন কলকাতা থেকে।
এর আগে সুদীর্ঘ ২৩ বছর কাল কলকাতায় আত্মগোপন করে ছিলেন! অত্যন্ত ভয়ংকর এই তথ্যটি সামনে এসেছে। এছাড়াও খুনি নিজ মুখে একথা স্বীকার করেছেন।
শহর কলকাতার বুকে দু-দশকেরও বেশি সময় ধরে লুকিয়ে ছিলেন এক হত্যাকারী! এটি আম জনতার কাছেও অত্যন্ত রহস্যময়। অথচ রাজ্য সরকার জানলো না?
জাঁকজমক তিলোত্তমা! প্রলেপ দেওয়া তিলোত্তমা! অথচ ভিতরে সন্ত্রাসীর বাস! এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায় স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত আশংকা প্রকাশ করেছেন।
তিনি শংকা প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ব তাবলিগ জামাতের অন্যতম মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্দলভিও এই শহরেই লুকিয়ে নেই তো?
উল্লেখযোগ্য যে, করোনাভাইরাসের মধ্যে বিধি-নিষেধ অমান্য করে ভারতের নয়াদিল্লিতে তাবলীগ জামাতের সদর দপ্তরে জমায়েতের ঘটনায় পুলিশের মামলার পর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন তাবলীগ প্রধান মাওলানা সাদ কান্ধলভী।
ইতিমধ্যেই নিজামুদ্দিন করোনাভাইরাসের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
দেশকে, দেশের জনগণের জীবন আগ্নেয়গিরির দিকে ঠেলে দিয়ে পালিয়েছে সাদ!
এমন ঘটনা প্রকাশের পর সংগঠনটির প্রধান মাওলানা সাদ এবং আরও ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় নেয়া সরকারের সকল নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মার্চ মাসের শুরুতে তাবলীগের ওই জমায়েতে যোগ দেয় কয়েক হাজার মানুষ। সেখানে বিভিন্ন দেশ থেকে বহু প্রতিনিধিও অংশ গ্রহণ করে।
অত্যন্ত জঘণ্য এই ঘটনা সারা ভারতের ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দিল্লি পুলিশ আগেই নোটিশ দিয়েছিল সাদকে। তবে গত ২৮ মার্চ থেকেই তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে ধরতে অভিযান চলছে। এফআইআরে বাকি যাদের নাম রয়েছে—ড. জিশান, মুফতি শেহজাদ, এম সাইফি, ইউনুস, মোহাম্মদ সালমান, মোহাম্মদ আশরাফ।
ভারতে এ মুহূর্তে দ্রুতহারে ছড়াচ্ছে করোনা সংক্রমণ! এবং নিজামুদ্দিন সংক্রমণ সংখ্যাই অধিক। নয়তো করোনা প্রতিরোধে ভারত সরকারের প্রাণপণ প্রচেষ্টায় একটা স্থিতিশীল অবস্থায় আসার সুযোগ ছিল। কিন্তু উল্কার মতো ছড়িয়ে পড়েছে এবার নিজামুদ্দিন ঘটনার পর পরই। একথা স্বীকার করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সাদের বিরুদ্ধে চলছে তুমুল অভিযান! তাঁর লুকনোর স্থান নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তথাগত রায়।
আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গে আবার ফিরে যাই, তাহলে দেখা যাবে, খুনি মাজেদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর এখনো বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৫ হত্যাকারি খুনি পলাতক রয়েছেন। তাঁরা হলেন—খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী ও এ এম রাশেদ চৌধুরী। তাঁরা সবাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা।
ফিরে দেখবো বঙ্গবন্ধু হত্যার ১৯৭৫ সালের সেই দিনটাঃ
“১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের বিচারে পদে পদে বাধা আসে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরপরই দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) অধ্যাদেশ জারি করা হয়। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বাতিল করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ওই বছরের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন।
১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকার দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় দেন। নিম্ন আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণের শুনানি শেষে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট দ্বিধাবিভক্ত রায় দেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চ ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেন। এরপর ১২ আসামির মধ্যে প্রথমে চারজন ও পরে এক আসামি আপিল করেন। কিন্তু এরপর ছয় বছর আপিল শুনানি না হওয়ায় আটকে যায় বিচার-প্রক্রিয়া।
দীর্ঘ ছয় বছর পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে আপিল বিভাগে একজন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাটি আবার গতি পায়। ২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির লিভ টু আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। আপিলের অনুমতির প্রায় দুই বছর পর ২০০৯ সালের অক্টোবরে শুনানি শুরু হয়। ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পাঁচ আসামির আপিল খারিজ করেন। ফলে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে হাইকোর্টের দেওয়া ১২ খুনির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে। এর মধ্য দিয়ে ১৩ বছর ধরে চলা এই মামলার বিচার-প্রক্রিয়া শেষ হলে দায়মুক্ত হয় বাংলাদেশ।
২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ওই রায় কার্যকরের আগেই ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আসামি আজিজ পাশা।” সূত্রঃ প্রথম আলো