আগামি ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত চানমারিস্থিত অসম অভিযান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের মাঠে অনুষ্ঠিত হবে অসম প্ৰকাশন পরিষদের ৩৩ সংখ্যক গুয়াহাটি গ্রন্থমেলা।
প্রকাশন পরিষদের সচিব প্ৰমোদ কলিতা গ্রন্থ প্রকাশক এবং বিক্রেতাদের জন্যে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণের প্র-পত্র বিতরণ প্রক্রিয়া আরম্ভ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এবং বিক্রেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন, ১০ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বরের ভিতর প্র-পত্র জমা দেওয়ার জন্যে।
শব্দহীন ভাষায় সুন্দরের গান শোনায় বই। বইমেলা হল বাঙালির প্রাণের আধেয়। আর তা যদি হয় ভারত-বাংলাদেশের মিলনমেলা, তা হলে তো আর কথাই নেই।
উল্লেখযোগ্য যে, গত বছর গুয়াহাটি গ্রন্থমেলায় বাংলাদেশের ১১ টি শীর্ষস্থানীয় গ্ৰন্থ প্ৰকাশন প্ৰতিষ্ঠান অংশগ্ৰহণ করার পাশাপাশি দেশের শিল্পীদের বাংলা গানে আপ্লুত হয়ে পড়েছিল আপামর বাঙালি-অসমিয়া।
চলতি বছরও বাংলাদেশের প্রকাশকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মেলায় অংশগ্রহণের জন্যে।
বাংলাদেশ জয়তী প্রকাশনের প্রকাশক এবং সম্পাদক ‘নর্থ ইস্ট নাও’-কে জানিয়েছেন, নভেম্বর মাসে শিলচরে বইমেলা সেরেই ফিরে আসবেন গুয়াহাটিতে। নর্থ ইস্ট নাও’এর মাধ্যমে তিনি সমগ্র অসমবাসীকে আমন্ত্রিত করেছেন গ্রন্থমেলায়।
বাংলাদেশের লেখিকা তসলিমা নাসরিনের অজস্র ভক্ত রয়েছে অসমসহ সারা বিশ্বে। প্রত্যেকেই নাসরিনের সাহসে নিজেকে সাহসী করতে চান।
দুঃখের বিষয়, বিগত বছর বহু স্বনামধন্য বাংলাদেশি লেখকের বই পাওয়া গেলেও বহু পাঠক হতাশ হয়েছেন মেলায় প্রিয় লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বই না পেয়ে। মেলার চত্বর ঘুরে দেখা গেছে কলামিস্ট তসলিমার বইয়ের জন্যে অত্যাগ্রহী হয়ে ছিলেন পাঠকরা। শুধু যে বাঙালিরাই নাসরিনের বই খুঁজছেন, তা মোটেও নয়। অসমিয়া ভাষায় অনুদিত তসলিমা নাসরিনের বই পড়ার জন্যে পাঠকের উৎসাহ চোখে পড়ার মতো।
তবে অসমে বইয়ের দোকানগুলোয় লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বইয়ের কোন অভাব নেই। গুয়াহাটির প্রত্যেক বই বিক্রেতাদের কাছেই পাওয়া যায় তাঁর বই।
তবুও একটি পার্থক্য থেকে যায় দোকান থেকে বই কেনা এবং বইমেলা থেকে বই কেনার মধ্যে। এবার আশার বিষয় দেশের প্রকাশকরা সম্ভবত মেলায় নিয়ে আসবেন তসলিমা নাসরিনের অমূল্য বইগুলো। যেহেতু পাঠকের চাহিদা রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানগুলো অর্ডার নেয়াও শুরু করে দিয়েছেন। নর্থ ইস্ট নাও-এর সাংবাদিককে আরো এক প্রকাশনী সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কেউ চাইলেই আগে থেকে অর্ডার করতে পারেন নাসরিনের বইয়ের নামগুলো। পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী তাঁরা আনিয়ে দেবেন।
তসলিমা নাসরিন আজ ২৫ বছর দেশছাড়া। কিন্তু তাতে কি? তাঁর কলম ঠিক পূর্বের মতোই ধারালো। নিজস্ব ধারায় বয়ে চলেছে। জগতে সততাকে থামিয়ে রাখা যায় না।
জীবনের প্রিয় বন্ধুর তালিকায় বইয়ের অবস্থান সবার উপরে। বই মানুষকে দেয় উদার হওয়ার শিক্ষা, শেখায় ভালোবাসতে। সত্য সুন্দর আনন্দময় অনুভূতিতে মনকে আলোড়িত করে তোলে বই।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ-তরুণীদের প্রাণবন্ত পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে গুয়াহাটি মেলা চত্বর।
স্বাস্থ্যের বিকাশে যেমন খাদ্যের বিকল্প নেই, তেমনি চিত্তের বিকাশে বইয়ের ভূমিকাও কোনো অংশে কম নয়। লেখক, পাঠক, প্রকাশক আর সাধারণের মিলনমেলা প্রাণের এই মেলা।
বিখ্যাত রুশ সাহিত্যিক ম্যাক্সিম গোর্কি বলেছিলেন, ‘আমার মধ্যে উত্তম বলে যদি কিছু থাকে তার জন্য আমি বইয়ের কাছে ঋণী।’
নতুন বইয়ের গন্ধ নিয়ে বেঁচে থাকুক বইমেলা।