নয়াদিল্লিঃ গত দেড় দিনে তুরস্ক (Turkey) এবং সিরিয়ায় (Syria) ভূমিকম্পে প্রায় ৫ হাজার মানুষ প্ৰাণ হারিয়েছেন। তৎপরতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছে সেদেশের প্ৰশাসন। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে ‘ভারত কতটা ভূমিকম্পপ্ৰবণ দেশ?’ সরকারের মতে, ভারতের প্রায় ৫৯ শতাংশ এলাকা ভূমিকম্পপ্ৰবণ (Earthquake risk)।
দেশের ৮ টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের শহর ও শহরগুলিকে ৫টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। দেশের রাজধানী দিল্লি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভূমিকম্পপ্ৰবণ জোন- ৪ এর মধ্যে পড়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং আর্থ সায়েন্সেসের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং(Minister of state for Science and Technology and Earth Sciences Jitendra Singh) ২০২১ সালের জুলাইয়ে লোকসভায় জানিয়েছিলেন যে “দেশে ভূমিকম্পের নথিভুক্ত ইতিহাস বিবেচনা করে, ভারতের মোট ভূমির মোট ৫৯ শতাংশে ভূমিকম্পের প্রবণতা রয়েছে। তিনি বলেন, দেশের সিসমিক জোনিং ম্যাপ (Seismic zoning map) অনুযায়ী মোট এলাকাকে চারটি সিসমিক জোনে(Seismic zone) ভাগ করা হয়েছে।
দেশের সবচেয়ে তীব্ৰ ভূমিকম্পপ্ৰবণ এলাকাকে জোন ৫এর আওতায় রাখা হয়েছে। যেখানে সবচেয়ে কম তীব্রতার ভূমিকম্পপ্ৰবণ এলাকাকে জোন ২এ রাখা হয়েছে। দেশের প্রায় ১১ শতাংশ অঞ্চল জোন-৫ এর মধ্যে রয়েছে। ১৮ শতাংশ জোন-৪, এবং ৩০ শতাংশ জোন-৩এর মধ্যে রয়েছে। বাকি অংশ জোন-২ এর মধ্যে পড়েছে।
মধ্য হিমালয় অঞ্চল বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্ৰবণ(Earthquake risk)। ১৯০৫ সালে কাঙ্গারায় বিশাল ভূমিকম্প আঘাত হানে। ১৯৩৪ সালে বিহার-নেপাল ভূমিকম্প হয়েছিল, যার তীব্ৰতার মাত্রা ছিল রিখটার স্কেল ৮.২। ভূমিকম্পে ১০ হাজার মানুষের প্ৰাণ কেড়েছিল।
১৯৯১ সালে উত্তরকাশীতে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ৮০০ জনেরও বেশি লোক প্ৰাণ হারায়। ২০০৫ সালে কাশ্মীরে ৭.৬ মাত্ৰার ভূমিকম্পের পর এই অঞ্চলে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
২০১৬ সালে একটি গবেষণায় বলা হয়েছে- এই অঞ্চলগুলিতে গত ৭০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে টেকটোনিক চাপ রয়েছে যা এখন বা ২০০ বছর পরে প্রকাশ হতে পারে। এটি কেন্দ্রীয় হিমালয়ের উপর বিশাল প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সিসমোলজিস্টদের ধারনা, এই ভূমিকম্পগুলি ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান এবং এশিয়ান টেকটোনিক প্লেটগুলির মধ্যে মিলিত হওয়ার একটি প্রকাশ, যা গত ৫ কোটি বছরে হিমালয় পর্বত তৈরি করেছে।
দেশের যে অঞ্চলগুলি ৫ টি জোনে ভাগ করা হয়েছে, সেই শহর সমেত রাজ্য এবং কেন্দ্ৰশাসিত অঞ্চলগুলি হচ্ছে গুজরাট(Gujarat), হিমাচল প্রদেশ(Himachal Pradesh), বিহার(Bihar), অসম(Assam), মণিপুর(Manipur), নাগাল্যান্ড(Nagaland), জম্মু ও কাশ্মীর(Jammu and Kashmir) এবং আন্দামান ও নিকোবর(Andaman and Nicobar)।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি(National Centre for Seismology) হল দেশের এবং এর আশেপাশে ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণের জন্য নোডাল সরকারী সংস্থা। দেশ জুড়ে ১১৫টি পর্যবেক্ষক নিয়ে গঠিত ন্যাশনাল সিসমোলজিক্যাল নেটওয়ার্ক। এর কাজই হচ্ছে সিসমিক কার্যকলাপের উপর নজরদারী রাখা।
একটি রিপোর্ট অনুসারে, দিল্লি তিনটি সক্রিয় সিসমিক ফল্ট লাইনের কাছাকাছি অবস্থিত: সোহনা, মথুরা এবং দিল্লি-মোরাদাবাদ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে গুরুগ্রাম দিল্লি-এনসিআরের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা কারণ গুরুগ্ৰাম সাতটি ফল্ট লাইনে অবস্থিত। এগুলি সক্রিয় হলে, উচ্চ তীব্রতার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে। এমন ভূমিকম্প সর্বনাশকারী।
সিসমোলজিস্টরা বলছেন যে যেহেতু দিল্লি-এনসিআর হিমালয়ের কাছাকাছি, তাই এটি টেকটোনিক প্লেটের পরিবর্তনগুলি অনুভব করে। হিমালয় বেল্টের যেকোনও ভূমিকম্প দিল্লি-এনসিআরকে প্রভাবিত করে।