নয়াদিল্লিঃ ভগবানের ইচ্ছাতেই (“The will of God”) নাকি গুজরাতের মোরবীর সেতু ভেঙে মৃত্যু হয়েছে শতাধিক মানুষের! আদালতে এমনটাই মন্তব্য করলেন এই ঘটনায় অভিযুক্ত ‘ওরেভা’ সংস্থার (Oreva company) গ্রেফতার হওয়া ম্যানেজার।
সেতু বিপর্যয়ের ঘটনায় ইতিমধ্যেই ওই সংস্থার দুই ম্যানেজার-সহ ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার তাঁদের মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের কাছে হাজির করানো হয়। সেখানেই ওই মন্তব্য করেন ধৃত ম্যানেজার দীপক পারেখ। মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক এম জে খানকে (Chief Judicial Magistrate MJ Khan) তিনি বলেন, ‘‘এই সেতু বিপর্যয় ঈশ্বরের ইচ্ছায় হয়েছে। ঈশ্বরের ইচ্ছা ছিল বলেই এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে।’’
মোরবীর ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ পিএ জালা (Deputy Superintendent of Police PA Zala) আদালতকে বলেন যে সেতুর তারটি ‘মরচে’ ধরা ছিল এবং সেতুর দেড়’শ বছরের পুরনো ধাতব তারগুলি পাল্টানো হয়নি।।
সরকারি অনুমোদন বা মান পরীক্ষা ছাড়াই ২৬ অক্টোবর সেতুটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। “রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের অংশ হিসাবে, শুধুমাত্র প্ল্যাটফর্মটি পরিবর্তন করা হয়েছিল। সেতুটি একটি তারের উপর ছিল এবং তারে কোনও তেল বা গ্রীসিং করা হয়নি। সেতুর মেঝেতে চার-স্তরযুক্ত অ্যালুমিনিয়ামের চাদর চাপানো হয়েছিল। যার ফলে সেতুর ওজন আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে যায়। আর তার উপর আবার রবিবার সেতুর উপর বহু মানুষের সমাগম হওয়ায় তারগুলি মানুষ-সহ সেতুর বাড়তি ওজন নিতে পারেনি। দর্শনার্থীদের ভিড়ে মাচ্ছু নদীর উপরে ছিঁড়ে পড়ে যায় সেতুটি।
প্রাথমিক তদন্তে এই তথ্য উঠে এসেছে যে, ‘ওরেভা’ সংস্থাকে সেতু সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হলেও তারা অখ্যাত এক ঠিকাদারকে কম টাকার বিনিময়ে সেই কাজের বরাত দিয়েছিল। অভিযোগ উঠেছে, যে ঠিকাদারের সংস্থাকে ওই সেতু সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা ওই ধরনের কাজের জন্য যোগ্য ছিল না। তা সত্ত্বেও এই ঠিকাদার সংস্থাকে ২০০৭ এবং ২০২২ সালে সেতু সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বলেও আদালতে মামলাকারী আইনজীবী জানিয়েছেন। প্রাথমিক তদন্ত শেষে বুধবার আদালতকে এই সব তথ্যই জানান মোরবীর DSP P A Zala।
ওরেভার Managing Director Jaysukhbhai Patel, যিনি প্রকাশ্যে দাবি করেছিলেন যে সংস্কার করা সেতুটি কমপক্ষে আট থেকে দশ বছর ধরে থাকবে, দুর্ঘটনার পর থেকে তাঁর দেখা মেলেনি। স্থানীয়রা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন- প্যাটেলকে শেষবার দেখা গিয়েছিল, তাঁর পরিবারের সাথে সংস্কারের পর সেতুটি খোলার সময়।
আহমেদাবাদে ওরেভা সংস্থার খামারবাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের FIRএ ওরেভার শীর্ষ কর্তাদের, মোরবী পুরসভার কর্মকর্তাদের উল্লেখ নেই যারা কোম্পানিটিকে চুক্তিটি দিয়েছেন।
ওরেভা গ্রুপের আরেক ম্যানেজার দীপক পারেখ এবং সেতু মেরামতকারী দুই সাব-কন্ট্রাক্টরকে শনিবার পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষী এবং টিকিট বুকিং ক্লার্ক সহ আরও পাঁচজন ব্যক্তিকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রাখা হয়েছে।
দেশের পাশাপাশি বিদেশেও সেতু বিপর্যয়ের ঘটনা নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। তার ওপর ওরেভা সংস্থার ওই ম্যানেজারের ভগবানের ইচ্ছা মন্তব্য BJPকে আরও অস্বস্তিতে ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।