“ব্লাসফেমি আইন বাতিল করুন। ধর্মনিন্দা কোন অপরাধ নয়। এটি মানবাধিকার। প্রত্যেকেরই স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। জুনায়েদ হাফিজকে মুক্ত করুন।” তসলিমা নাসরিন।
Abolish blasphemy law. Blasphemy is not a crime. It is human rights. Everyone has the right to express their views. Free Junaid Hafeez. https://t.co/FxMBXarAwV
— taslima nasreen (@taslimanasreen) December 22, 2019
পাকিস্তানের অধ্যাপকের সামনে ঝুলছে মৃত্যুর খাঁড়া।
এই সময় ফের মানবতার পাশে দাঁড়ালেন ধর্মনিরপেক্ষ লেখক তসলিমা নাসরিন।
যে সময় পাকিস্তান ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন তুলছে যে এই আইন ধর্মনিরপেক্ষ নয়।
ঠিক সেই মুহূর্তে হজরত মহম্মদ এবং কোরান নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে বিতর্কিত পোস্টের জেরে এক অধ্যাপককে প্রাণদণ্ডের নির্দেশ দিল পাকিস্তান আদালত!
স্থিতি কোনদিকে? ‘না আমি দোষ করলে সাতখুন মাপ। কিন্তু অন্যে করলে নৈব নৈব চ।’
পাকিস্তান রয়েছে পাকিস্তানেই। সে দেশ মাঝেমাঝেই কিন্তু ভারতের সহিষ্ণুতা নিয়ে ভারি ভারি প্রশ্ন তোলে। বিঁধতে ছাড়ে না তিলমাত্র।
কিন্তু সে দেশেই ধর্মনিরপেক্ষতার, মুক্তচিন্তার স্থান নেই!
৩৩ বছর বয়সী ওই অধ্যাপকের নাম জুনায়েদ হাফিজ। শনিবার তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনায় মুলতান জেলা ও সেশন কোর্টের বিচারক।
মর্মান্তিক বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই বিতর্কের ঢেউ উঠেছে বিশ্বজুড়ে।
পাকিস্তানের নিন্দা বিশ্ববাসীর মুখে মুখে।
জুনায়েদের মুক্তির দাবিতে রবিবার ট্যুইট করেন বাংলাদেশের নারীবাদী লেখক তসলিমা নাসরিন।
সম্প্রতি যখন সারা ভারতে ‘সিএএ’ নিয়ে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে এবং পাকিস্তান এই আইনকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ নয়’ আখ্যা দিয়ে তীব্র সমালোচনায় মেতেছে, সরাসরি সে মুখে উত্তর ছুঁড়ে দিয়েছেন নাসরিন।
“এটি অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় যখন বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের কর্মকর্তারা ভারতের সিএএ সম্পর্কে দুঃখ প্রকাশ করেন। তাঁরা অভিযোগ করছেন যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে। কিন্তু তাঁরা কি তাদের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা রেখেছেন? তাঁদের রাষ্ট্র কি ধর্মনিরপেক্ষ? ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, ধর্মনিরপেক্ষ থাকবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো বরং ধর্ম নিরপেক্ষ হওয়ার চেষ্টা করুক।”
নয়া সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান সমাজের পর পাকিস্তানের হিন্দু, খ্রিস্টান এবং শিখ ধর্মাবলম্বী লোকেরা এই আইনকে নাকচ করে দিয়েছেন এবং সিএএ’ আনয়ন করা ভারত সরকারকে বারংবার ধিক্কার জানাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, জুনায়েদ পাকিস্তানের মুলতানে অবস্থিত বাহাউদ্দিন জাকারিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য বিভাগের অতিথি অধ্যাপক ছিলেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি করতেন সমাজসেবামূলক কাজ।
বিগত ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ হজরত মহম্মদ এবং কোরান সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়াতে বিতর্কিত পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
প্রায় একবছর পর ২০১৪ সালে মুলতানের জেলা আদালতে মামলার শুনানি শুরু হয়।
আর শনিবার, ২১ ডিসেম্বর জুনায়েদকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয় পাকিস্তান আদালত। অতিরিক্ত সেশন জজ কাশিফ কাইয়ুম পাশাপাশি ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করে। এবং জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।
ঘটনা এখানেই কিন্তু শেষ নয়। ২০১৪ সালের মে মাসে কট্টরপন্থীরা জুনায়েদ হাফিজের প্রথম কৌঁসুলিকে মামলা থেকে সরে যাবার নির্দেশ দিয়েছিল।
কিন্তু আইনজীবী তাঁদের কথা না শোনায় রশিদ রেহমাকে গুলি করে খুন করা হয়।
কট্টর দেশের মর্মান্তিক এই রায় ঘোষণার পর আদালতে উপস্থিত থাকা আইনজীবীরা কার্যত পৈশাচিক আনন্দের উৎসব পালন করেছেন। সরকারি কৌঁসুলি আজিম চৌধুরি আদালতের ঘোষিত শাস্তির জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন! এবং আইনজীবীরা নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করতেও শুরু করেন এদিন ‘আল্লা হো আকবর’ ধ্বনি দিতে দিতে।
আদালতের এই নির্দেশে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাংশ পাকিস্তানি জনতারাই। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ধিক্কার জানিয়েছেন এই রায়ের বিরুদ্ধে। সংগঠনের মুখপাত্র রাবিয়া মেহমুদ বলেন, “অবিলম্বে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় মামলা প্রত্যাহার করে নিক সরকার। পাশাপাশি তাঁর পরিবার ও আইনজীবীদেরও নিরাপত্তা দেওয়া হোক।”