শিক্ষক-ছাত্রীকে, বাবা মেয়েকে, দাদা বোনকে ধর্ষণ করে চলেছে! এ কেমন যুগ পড়ল? মেয়েদের প্রতি পুরুষজাতি কি সমস্ত সম্ভ্রম হারিয়ে ফেলেছে? নারী তাঁদের কাছে কেবলই রক্ত-মাংসের পিণ্ড ছাড়া আর কিছুই নয় কি?
গোয়ার প্রধান সাঁতার কোচ সুরজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জাতীয় পদক জয়ী পশ্চিমবঙ্গের ১৫ বছরের সাঁতারু কিশোরীটিকে কৌশলে গোয়ায় ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন।
কিশোরীসহ তার পরিবার চলতি বছরের মার্চ মাসেই সেখানে গিয়েছিলেন। সেখানে পা রাখার পর থেকেই পরীকে (নাম পরিবর্তিত) ধর্ষণ করা শুরু করেন ঐ কোচ। দীর্ঘদিন এভাবে নির্যাতন চলতে থাকে তার ওপর। ভয়ে সিটিয়ে থাকত মেয়েটি। কাউকে কিছু বলতে পারত না। কিন্তু আর নয়। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল তার। নরককুণ্ড থেকে মুক্তির জন্যে দিন রাত হাঁসফাঁস করতে থাকে সে।
একদিন নিজেই ঠিক করল সব ফাঁস করে দেবে। সেই মতোই কোচের দুষ্কর্মের ভিডিও মোবাইলবন্দি করে। কিশোরী বলে, ‘‘গোয়া যাওয়ার পর থেকেই স্যার আমার সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করতেন। ব্ল্যাকমেল করতেন। আমি আর মানসিকভাবে নিতে পারছিলাম না। তখনই ঠিক করি, কিছু একটা করতে হবে। সেই মতো মোবাইলে ওই ভিডিও রেকর্ড করি।’’
ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, ছাত্রীর পা দেখার ছলনা করে আস্তে আস্তে তাঁর সারা শরীরে অশ্লীলভাবে হাত দিচ্ছেন, তিনি তখন জানতেনও না, সে সবই রেকর্ড হচ্ছে। গুণবান কোচ একবারের জন্যেও দরজা বন্ধ করেননি। খুব সন্তর্পনে একবার দরজার দিকে তাকাচ্ছেন ফের ছাত্রীকে নির্যাতন করছেন।
গলায় বুজে আসছে চাপা কান্না। কথা বলতে গিয়ে আটকে যাচ্ছে। তবুও স্বগতোক্তির মতোই বলে চলল, ‘‘গত পাঁচ বছর ধরে স্যারের পরিবারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক। খুবই ভাল ছিল। স্যারের ছেলেও খুব ভাল সাঁতারু। কোনও দিন ভাবিনি, স্যার আমার সঙ্গে এ রকম…!’’
বাঙালি কোচের বিরুদ্ধে রিষড়া থানার পাশাপাশি গোয়ার মাপুসা থানায় ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ (ধর্ষণ), ৩৫৪ (শ্লীলতাহানি) এবং শিশু নির্যাতন বিরোধী আইন পস্কোতে মামলা করা হয়েছে। গোয়ার পুলিশ নিজ উদ্যোগে সেই মামলা করেছে।
চকেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী কিরেন রিজিজু ধর্ষক কোচের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার টুইট করে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী রিজিজু বলেন, ‘‘আমি কড়া পদক্ষেপ করেছি। গোয়া সুইমিং অ্যাসোসিয়েশন ওই কোচ সুরজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে। সুইমিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়াকে জানিয়েছি, সুরজিৎ যেন দেশের কোথাও চাকরি না পায়। সমস্ত ফেডারেশন এবং সর্ব ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য।’’