ঢাকা: বাংলাদেশের ক্রিকেটার তানজিম সাকিবকে নিয়ে গোটা দেশে হৈচৈ পড়েছে। যে বীভৎস পোস্ট তিনি করেছেন, তার প্রেক্ষিতেই এই হৈচৈ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চরম নারী বিদ্বেষী পোস্টের জন্য শেষ অবধি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে ক্ষমা চেয়েছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। বিষয়টি জানিয়েছেন ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস।
জালাল ইউনুস জানান, ‘ক্রিকেট অপারেশন্স থেকে তানজিম সাকিবের সাথে আমাদের আলোচনা হয়েছে। ওর সাথে আমরা কথা বলেছি। মিডিয়া কমিটি থেকেও তার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে।
তাকে আমরা অবগত করেছিলাম, যেসব পোস্ট ফেসবুকে এসেছে… তার বক্তব্য হচ্ছে- কাউকে আঘাত করার উদ্দেশে এরকম পোস্ট দেওয়ার কথা না। সে যেসব পোস্ট দিয়েছে, তার নিজ থেকে দিয়েছে, কাউকে উদ্দেশ্য করে না। এটা দেওয়ার পর কারো আঘাত যদি লেগে থাকে হি ইজ সরি ফর দ্যাট। একটা কথা এসেছে নারীদের ব্যাপারে।
নারীদের ব্যাপারে যেসব পোস্ট ছিল, সে বলেছে আমি এটার দায়দায়িত্ব নিচ্ছি।
আমি নারীবিদ্বেষী নই। এই দাবি পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছে। সে বলেছে আমার মা একজন নারী। আমি কোনো দিনও নারী বিদ্বেষী হতে পারি না।
এটা হচ্ছে তার বক্তব্য। আমরা তাকে সতর্ক থাকার জন্য বলেছি। ভবিষ্যতে যদি কোনো পোস্ট দিয়ে থাকে সেটা বোর্ড থেকে মনিটর করা হবে।’
জালাল ইউনুস আরো বলেন, ‘সে (তানজিম সাকিব) বলেছে আমি দুঃখিত। আমরা সতর্ক করেছি, ভবিষ্যতে যাতে এমন পোস্ট না দেওয়া হয়। সে বলেছে এ ধরনের পোস্ট থেকে বিরত থাকবে। সে একটা বড় কথা বলেছে- সে নারী বিদ্বেষী নয়। সে বলেছে আমার মা-ই তো একজন নারী। আমি কীভাবে নারী বিদ্বেষী হতে পারি। (সে কোন ধ্যানধারণার অনুসারী, তার মানসিকতা কেমন) অবশ্যই এটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তাকে পর্যবেক্ষণ করব। তার পরিবারও এ ব্যাপারে খুবই শঙ্কিত। এমন পরিস্থিতি তারাও আশা করেনি। তারাও দুঃখিত। সামনে বিশ্বকাপ আছে, সে ইয়াং ছেলে, বয়স কম। এজন্য তাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
এরপরও ওরকম কিছু যদি থাকে তাহলে আমরা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। সে ডিলিট করে ফেলেছে। সে কারো সাথে মিশে না। সে যা দিয়েছে নিজে থেকে দিয়েছে। আমরা সেজন্যই বলছি ভবিষ্যতে যদি কোনো কার্যক্রম থাকে আমরা অবশ্যই মনিটর করব। ক্ষমা চেয়েছে, তার সাথে আমরা আলাপ-আলোচনা করব। যদি এমন কোনো সমস্যা থাকে, অবশ্যই আমরা সেই সহায়তাও করব।’
তবে আমার মা-ই তো নারী– এই কথার মধ্যেই একটা বড় হিপোক্রেসি লুকিয়ে আছে। আসলে সমাজে যারাই নারীবিদ্বেষী তাদের সবার মা ই তো নারী। তাহলে তারা কেন নারী বিদ্বেষী? প্রশ্ন উঠছে। ক্ষমা চাইলেও এই ধরনের ব্যক্তির মস্তিষ্কে গেঁথে আছে নারী বিদ্বেষ।
সাকিব পোস্ট দিয়েছিলেন:
‘স্ত্রী চাকরি করলে স্বামীর হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে সন্তানের হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে তার কমনীয়তা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পরিবার ধ্বংস হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পর্দা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে সমাজ নষ্ট হয়। স্ত্রীকে যেই স্বামী বলে- আমার স্ত্রীর চাকরি করার দরকার নেই।
আমি যা পাই তোমাকে খাওয়াব, সে তাকে রাজরানি হয়ে আছে। এখন সে রাজরানি না হয়ে কর্মচারী হতে চায়। আসলে স্ত্রী স্বামীর মর্যাদা বোঝেনি, স্ত্রী নিজের মর্যাদাও বোঝেনি। ঘর একটি জগৎ।
অসংখ্য কাজ রয়েছে। আজ ছেলেদের বেকারত্বের বড় কারণ হচ্ছে- মেয়েরা এগিয়ে আসছে, ছেলেরা কোনো চাকরি পাচ্ছে না। একটি ছেলেকে চাকরি দিলে পুরো পরিবারের উপকার হয়। (অতএব মা-বোনেরা নিজের আত্মমর্যাদা রক্ষার্থে স্বামীর আনুগত্য ও বাসায় অবস্থান করে রানির হালাতে অবস্থান করুন। অতএব মা-বোনেরা দুনিয়া কামাতে যেয়ে আখেরাত না হারিয়ে ঘরে অবস্থান করে স্বামী-সন্তানের খেদমত করে দুনিয়া ও আখেরাত দুটিই কামাই করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তাওফীক দান করুন। আমিন।)’