ক্ষণে ক্ষণে বাঁক পরিবর্তন। পেন্ডুলামের মত দুলতে দুলতে থাকা ম্যাচটিতে স্নায়ুর চাপ বাড়ছিল মুহূর্তে মুহূর্তে। উদ্বোধনী জুটিতে ৫০ ওঠার পর যেভাবে ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল বাংলাদেশ, সেখান থেকে জয় সম্ভব-এটাই ছিল যেন দুঃস্বপ্ন। অবশেষে চরম অনিশ্চয়তার ম্যাচটিকে সম্ভবে পরিণত করলেন অধিনায়ক আকবর আলির অসাধারণ ব্যাটিং। সত্যিকার একটি ফাইনাল ম্যাচ উপভোগ করলো পচেফস্ট্রমের সেনওয়েজ পার্কের সমর্থকরা। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানোর ম্যাচটিতে সব বিভাগে শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েই চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। ভারতের মত শক্তিশালী দলকে ২৩ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারেরমত যুব বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ।
এই প্রথম যুব বিশ্বকাপের ফাইনাল খেললো বাংলাদেশ এবং প্রথমবারেই বিশ্বকাপের ট্রফি তুলে নিলো ঘরে। চারবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত। সাতবার তারা খেলেছে ফাইনালে। তেমন একটি দলকে হারিয়েই বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট পরলো বাংলাদেশের যুবারা।
দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্টুমে রোববার ফাইনালের উত্তেজনাকর ম্যাচে টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। উইকেটের সুবিধা নিয়ে ভারতকে আটকে দেওয়াই ছিল লক্ষ্য। শরিফুল-সাকিবরা দুর্দান্ত বোলিং করে সেই কাজটা দারুণভাবে করেন। ভারতকে ১৭৭ রানে অলআউট করে দেন। জবাব দিতে নেমে ভালো শুরু করে যুবারা। উইকেট না হারিয়ে তুলে ফেলে ৫০ রান। কিন্তু এরপরই যেন পথ হারায় তারা।
তামিম-জয়, হৃদয়-শামিমরা ফিরে যান একে একে। ওদিকে ইনজুরি নিয়ে উঠে যান ওপেনার পারভেজ জয়। ভারতীয় লেগ স্পিনার রবি বিষ্ণুর ঘূর্ণির কোন জবাব পাচ্ছিলেন না বাংলাদেশ যুবারা! দলকে ভরসা দিতে তাই ইনজুরি নিয়ে পারভেজ ইমনকে ক্রিজে আসতে হয়। তিনি মাঠে নেমে অধিনায়ক আকবর আলীকে সঙ্গ দিয়ে ম্যাচ বের করে আনার আভাস দেন। কিন্তু নিজের ৪৭ রানে শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে ফিরে যান এই ওপেনার।
তবে দলকে পথ হারাতে দেননি অধিনায়ক আকবর আলী। ঠান্ডা মাথায় দলকে টানছিলেন তিনি। যেন ভারতের উইকেটরক্ষক অধিনায়ক ‘এমএস ধোনি’। তাকে উইকেট ধরে রেখে সঙ্গ দিচ্ছিলেন স্পিনার রাকিবুল। কিন্তু জয় থেকে মাত্র ১৫ রান দূরে থাকতে নামে বৃষ্টি। বাংলাদেশের জয়ের জন্য বৃষ্টি আইনে লক্ষ্য নেমে আসে ৩০ বলে ৭ রান। ওই রান তুলতে কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি। বৃষ্টির পরে নেমেই রাকিবুল দারুণ এক চার মেরে দলের জয় নিশ্চিত করে ফেলেন। আকবর খেলেন ৪৩ রানের দারুণ এক ইনিংস।
ভারতের হয়ে সেমিফাইনালে সেঞ্চুরির পর ফাইনালেও দুর্দান্ত খেলেন দেশটির ওপেনার জ্বসশী জয়সাওয়াল। তিনি খেলেন ৮৮ রানের ইনিংস। এছাড়া তিলক ভার্মার ব্যাট থেকে ৩৮ রান আসে। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ধ্রুব জুরেল ২২ রান করে আউট হন। অবশ্য ভারতের আর কোন ব্যাটসম্যান দশ রানের কোটায় যেতে পারেননি।
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পেসাররা এ ম্যাচে বাজিমাত করেন। স্পিনার হাসান মুরাদের জায়াগায় দলে ঢোকা পেসার অভিষেক দাস তুলে নেন ভারতের তিন উইকেট। ফাইনালে জয়ী ম্যাচের সমন্বয় ভেঙে তাকে কেন দলে নেওয়া হয় সেটার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন। এছাড়া অন্য দুই পেসার শরিফুল ইসলাম এবং সাকিব দুটি করে উইকেট নেন। স্পিনার রাকিবুল নেন একটি উইকেট। দারুণ ফিল্ডিং করে ভারতের দুই ব্যাটসম্যানকে রান আউট করে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত: ৪৭.২ ওভারে ১৭৭/১০ (জসওয়াল ৮৮, তিলক ভার্মা ৩৮, ধ্রুব জুরেল ২২; অভিষেক ৩/৪০, তানজিদ হাসান সাকিব ২/২৮, শরিফুল হাসান ২/৩১)।
বাংলাদেশ: ৪২.১ ওভারে ১৭০/৭ (পারভেজ হোসেন ইমন ৪৭, আকবর আলী ৪৩*, তানজিদ হাসান তামিম ১৭; রবি বিষ্ণু ৪/৩০)।
ফল: বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে জয়ী।