কলকাতাঃ বাংলাদেশের লেখক তসলিমা নাসরিন (taslima nasrin) খেতে যেমন জানেন, তেমনি খাওয়াতেও জানেন। তবে যতবারই রান্না বা খাওয়ার কথা এসেছে ততবারই একটা আক্ষেপ থেকে গেছে, সেটা ইলিশ নিয়ে।
এর আগেও লিখেছিলেন তসলিমা(taslima nasrin)—‘…গুজরাটের, উড়িষ্যার, বার্মার, কোলাঘাটের, ডায়মন্ড হারবারের ইলিশ খেয়ে খেয়ে ক্লান্ত। পদ্মার ইলিশ কতকাল খাইনি! পদ্মার ইলিশ না খেলে সত্যিকার ইলিশ খাওয়া হয় না।’
আবারো মাছ নিয়ে বেশ কিছু কথা লিখলেন তসলিমা নাসরিন (taslima nasrin)। তিনি লিখেছেনঃ“অনেকে বোয়াল মাছ খায় না, মাগুর মাছ খায় না, আমি খাই। অনেকে পমফ্রেট খুব পছন্দ করে, আমি খাই, তবে পমফ্রেটের জন্য পাগল নই। পমফ্রেটকে আমি রূপচাঁদা বলি। আর ‘রূপচাঁদা’ নামে যে মাছ আছে, সে মাছকে আমি কিছুই বলি না, খাইও না।
মাছ দেখতে সুন্দর না হলে আমার খেতে ইচ্ছে করে না। চিতল মাছের মসৃণ রূপোলি শরীর থেকে নূর বেরোয়, দেখলেই পেটি খাবো নয়তো কোপ্তা বা মুইঠ্যা খাবো, মনে মনে ভেবে নিই। সাপের মতো দেখতে কিছু মাছ আছে, সেই মাছের ধারে কাছে যাই না।কই মাছ আমার প্রিয়, কাজলি মাছও প্রিয়। সবচেয়ে প্রিয় ইলিশ মাছ, তবে যে কোনও ইলিশ মাছ হলে চলবে না, পদ্মার বা বড়জোর গঙ্গার ইলিশ হতে হবে।
ইলিশ কিনতে গিয়ে প্রতিবছর আমাকে ঠকতে হয়। বেজায় দাম দিয়ে কত যে গুজরাটের ইলিশ কিনে এনেছি বাজার থেকে। খাওয়ার সময় মনে হয়েছে কাতলা মাছ খাচ্ছি। ইউরোপে থাকার কারণে নদী আর সমুদ্রের মাছ খাওয়া হয়েছে প্রচুর। কড, সোল, স্যামন, টুনা, ট্রাউট, হাঙ্গর, হালিবুট, ফ্লাউন্ডার এরকম অনেক। ইউরোপে যেভাবে এসব রান্না হয়, সেভাবে খেতে ভালো, কিন্তু আমাদের তেল মশলায় রাঁধলে ওদের রূপ রস গন্ধ কিরকম যেন নষ্ট হয়ে যায়।
সেদিন আমি হিমালয়্যান রেইনবো ট্রাউট রান্না করলাম ঠিক বাঙালি মাছ রান্নার কায়দায়। খেয়েছি, কিন্তু খেয়ে খুব তৃপ্তি পাইনি। আগে ওটিকে বাটার আর কিছু হার্ব আর ব্ল্যাক পেপার দিয়ে ওভেনে বেক করেছিলাম, বেশ স্বাদ ছিল খেতে। আসলে অভ্যেস, যে মাছ যেভাবে খেয়ে অভ্যেস। সামুদ্রিক প্রাণী চিংড়ি, অক্টোপাস, স্কুইড আমার খুব প্রিয়,। চিংড়ি তো যেভাবে রান্না করি, সেভাবেই ভালো লাগে”।
তবে তসলিমা (taslima nasrin) রান্নার ব্যাপারে চীনের শেফদের গুরু মানেন। সেকথাও লিখেছেন। “রান্নার ব্যাপারে আমি চীনের শেফদের গুরু মানি। ইতালীয় ফরাসী শেফরাও বেশ ভালো। ইংলিশ, জার্মান, নর্থ ইউরোপীয়ান খাবার আমি একেবারেই পছন্দ করি না।
তসলিমা লিখেছেন (Taslima nasrin); আসলে ভালো খাদ্য- সংস্কৃতি সব দেশে নেই। আমার মাঝে মাঝেই মনে হয়, বাঙালি (Bengali) খাবারে আরও রকমারি মাছ আসা দরকার, আরও নানা রকম রান্নাও আসা দরকার। ট্রাডিশানাল খাবারগুলো থাকুক, কিন্তু আরও নানা রকম খাবার আসুক, এবং রান্না নিয়ে আরও এক্সপেরিমেন্ট হোক।
মিঠে জলের মাছ খেয়েই আমরা অভ্যস্ত, সেকথা বলে তসলিমা (Taslima nasrin) বলেন, আমরা মিঠে পানির মাছ খেয়ে অভ্যস্ত, নদীর এবং সমুদ্রের মাছকে আরও সুস্বাদু করে রান্না করে কীভাবে বাঙালির রসনা তৃপ্ত করা যায় , সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। আমি ভাবলে ঘোড়ার ডিম হবে। শেফদের ভাবতে হবে”।