ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সেরা সংগীতশিল্পী মান্না দে’র আজ ১০১’তম জন্মদিন।
প্রতিভাসম্পন্ন শিল্পীর নাম প্রবোধ চন্দ্র দে, ডাক নাম মান্না দে।
কিংবদন্তি এই শিল্পী বাংলা, হিন্দি, মারাঠি ও গুজরাটিসহ অজস্র ভাষায় ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সংগীত চর্চা করেছিলেন। বৈচিত্রের বিচারে তাকে হিন্দি গানের ভুবনে সবর্কালের সেরা গায়ক হিসেবে স্বীকার করেন অনেক বিশেষজ্ঞ সংগীতবোদ্ধা।
জীবনদীপ নিভে গেছে কিন্তু মানুষের হৃদয় থেকে নয়।
গায়ক মান্না দে’র জন্ম হয়েছিল ১৯১৯ সালের ১ মে। তাঁর বাবার নাম পূর্ণচন্দ্র দে এবং মা মহামায়া দে। তিনি তাঁর ছোট কাকা কৃষ্ণ চন্দ্র দে এবং ওস্তাদ দবির খানের কাছে গানের শিক্ষা লাভ করেছিলেন। স্কটিশ স্কুলে পড়াকালীন মান্না দে তাঁর সহপাঠীদের গান শুনিয়ে আসর মাতিয়ে রাখতেন। ওই সময় আন্তঃকলেজ গানের প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিকভাবে ৩ বছর তিনটি আলাদা শ্রেণিবিভাগে তিনি প্রথম হয়েছিলেন।
আধুনিক বাংলা গানের জগতে সর্বস্তরের শ্রোতাদের কাছেই ব্যাপক জনপ্রিয় ও সফল সংগীত ব্যক্তিত্ব ছিলেন মান্না দে। পাশাপাশি বাংলা ও হিন্দি সিনেমার গায়ক হিসেবেও অশেষ সুনাম অর্জন করেছিলেন।
মোহাম্মদ রাফি ও কিশোর কুমারের মতো তিনিও পঞ্চাশ থেকে সত্তরের দশক পর্যন্ত ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সংগীত জীবনে তিনি সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি গান রেকর্ড করেন।
মান্না দে’র গাওয়া কালজয়ী গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’, ‘আবার হবে তো দেখা’, ‘এই কূলে আমি আর ওই কূলে তুমি’, ‘তীর ভাঙা ঢেউ আর নীড় ভাঙা পাখি’, ‘যদি কাগজে লেখো নাম’, ‘সে আমার ছোট বোন’ ইত্যাদি। হিন্দিতেও তার অসংখ্য জনপ্রিয় গান রয়েছে।
সংগীত ভুবনে তার অসামান্য অবদানের কথা স্বীকার করে ভারত সরকার ১৯৭১ সালে তাকে ‘পদ্মশ্রী’, ২০০৫ সালে ‘পদ্মবিভূষণ’ এবং ২০০৭ সালে ‘দাদাসাহেব ফালকে সম্মাননা’ প্রদান করে। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে রাজ্যের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘বঙ্গবিভূষণ’ দেয়। এছাড়া একাধিক বার আজীবন সম্মাননা ও ফিল্মফেয়ারসহ অসংখ্য পুরস্কার রয়েছে কিংবদন্তি মান্না দে’র ঝুলিতে।
২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর মারা যান প্রখ্যাত এই সংগীত প্রতিভা। ওই বছরের ৮ জুন ফুসফুসের জটিলতা দেখা দেয়ায় মান্না দে’কে ব্যাঙ্গালোর একটি হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। ৯ জুন ভারত ও বাংলাদেশজুড়ে তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসকরা সে গুজবের অবসান ঘটান। নিশ্চিত করেন, মান্না দে বেঁচে আছেন। পরে ২৪ অক্টোবর ওই হাসপাতালেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।