
জীবন-মৃত্যু, স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু কোন কোন সময় এই মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না। ভারতের বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মারা গিয়েছেন, মানুষ নিতে পারেনি সেই মৃত্যুটা। ভারত তো বটেই, বাংলাদেশের মানুষও দুঃখিত হয়েছেন তাঁর মৃত্যুতে। কাজের দ্বারা মানুষের পরিচয়।
আমরা হারালাম আরো একজন বরেণ্য অভিনেতাকে।
তিনি বাংলাদেশের এটিএম শামসুজ্জামান।
একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ অভিনেতার মৃত্যুতে ভক্ত অনুরাগীদের প্রাণ কাঁদছে।শনিবার সকাল সাড়ে আটটায় রাজধানী ঢাকার সূত্রাপুরের নিজস্ব বাড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বাংলাদেশের সংবাদ পত্রিকায় অভিনেতার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তাঁর মেয়ে কোয়েল আহমেদ।
আজ, শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা ০৬ মিনিটে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কোয়েল আহমেদ বলেন, ‘বাবা আর নেই। বাবা আর নেই। শুক্রবার বিকেলে আব্বাকে বাসায় নিয়ে আসছিলাম। উনি হাসপাতালে থাকতে চাইছিলেন না। তাই বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম। আমি রাত ২টা ৩০ মিনিটে বাবার বাড়িতে এসেছি’।
অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরি এটিএম শামসুজ্জামানের সঙ্গে একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি লেখেন,
“শেষ পর্যন্ত সত্যটা হলো… এ টি এম ভাই চলে গেলেন।। আর হলো না দেখা। কত সময়, কত স্মৃতি, আবেগ তাড়িত হচ্ছি খুব, অপার শ্রদ্ধা। শান্তিতে থাকুন আপন মানুষ এটিএম শামসুজ্জামান”।
শেষ পর্যন্ত সত্যটা হলো… এই কথাটি অত্যন্ত দুঃখের সাথে লিখেছেন তিনি। কারণ এর আগে বেশ কয়েকবার এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যু হয়েছে এই বলে গুজব ছড়িয়েছিল।
এমন খবরে পরিবার খুবই বিব্রত হয়ে পড়ে। এমন মানসিকতাও থাকতে পারে মানুষের, যারা একজন জলজ্যান্ত মানুষকে মৃত বানিয়ে দিতে পারেন!
এমনকি এর পর পর অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন এটিএম আর নেই। তবে এবার সত্যি তিনি আর নেই!
গত বুধবার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হলে এটিএম শামসুজ্জামানকে রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ড. আতাউর রহমান খানের তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি । কিন্তু মানুষটি এতটাই প্রাণবন্ত থাকতে ভালোবাসেন যে হাসপাতালে তিনি থাকতে চান না। ফলে গতকাল শুক্রবার বিকালে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগেও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে কয়েক মাস এ হাসপাতালে কাটাতে হয়েছিলে তাঁকে। অসুস্থতার জন্যে অনেকদিন যাবৎ অভিনয় থেকেও দূরে ছিলেন তিনি।
এটিএম শামসুজ্জামান তাঁর অভিনয় দিয়ে সারাটা জীবন হাসিয়ে কাঁদিয়ে গিয়েছেন দর্শককে।
‘মানুষ হিসেবে এটিএম শামসুজ্জামান অত্যন্ত ভালো একজন মানুষ ছিলেন। বাস্তবজীবনে সৎ-নিষ্ঠাবান ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী ছিলেন। এটা তাঁর রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনা’। এপার ওপার বাংলায় একথা বলেন বাংলাদেশের একজন এটিএম অনুরাগী।
১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকায় জন্ম নেওয়া এ অভিনেতার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ১৯৬৮ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘এতটুকু আশা’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে।
অভিনয়ের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। অভিনয়ের বাইরে পরিচালক, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার হিসেবেও তিনি পরিচিত।
১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন এটিএম শামসুজ্জামান।
শিল্পকলায় অবদানের জন্যে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক লাভ করেন এই শিল্পী।