সংস্কৃতিসম্পন্ন বাঙালি সংস্কৃতির নামে গ্রহণ করছে অপ-সংস্কৃতি।
বিশ্বভারতীর কলাভবনে নন্দন মেলা চলছিল। সেখানেই দেখা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারা তারস্বরে বিকৃত স্বরে গাইছেন ‘চাঁদ উঠেছে গগনে’ গানটি।
এমন মর্মান্তিক ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে শিল্পীজগত।
# শুভমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ আমি জানি না ইউটিউব কীভাবে এসব প্রোমোট করছে। আমরা যদি সম্মিলিতভাবে তাদের কাছে প্রতিবাদপত্র পাঠাই তবে তারা সম্ভবত তুলে নেবে। যে ব্যক্তি এই প্যারডি তৈরি করেছেন তাঁকে ভদ্রলোক বলতে পারছি না। এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে তিনি আর কিছু ইউটিউবে আপলোড করতে না পারেন। সরকারের উচিত তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। এটা কিন্তু প্যারডি নয়, অশ্লীলতা। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক বয়কটের দাবি জানাচ্ছি। বুঝতে পারছি না কলাভবনের ছাত্রছাত্রীরা এর দ্বারা কী করে উদ্বুদ্ধ হলেন। তাহলে কি আমাদের শিক্ষায় কোনও গলদ রয়ে গেল? খারাপ জিনিস দ্বারা উদ্বুদ্ধ হওয়ার দিন এল! বুঝতে পারছি না।
# রাঘব চট্টোপাধ্যায়ঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ, প্রথমেই বলি যে প্যারডিটা তৈরি করেছেন তিনি বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকারী। আমার প্রথম প্রশ্ন, ওই ব্যক্তির তৈরি ভিডিও কেন আপলোড হচ্ছে, কারা শেয়ার করছে, মজা করে এমন একটা গর্হিত অপরাধকে আস্কারা কেন দেওয়া হচ্ছে? আমরা বাবা-মাকে নিয়ে এমন কিছু কি করব! তাহলে রবীন্দ্রনাথ, নজরুলদের নিয়ে করব কেন? এটা শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছি যে, কলাভবনের পড়ুয়ারা এই কাজ করেছেন। যাঁরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে আদর্শে এগিয়ে চলার জন্য ওখানে পড়তে গিয়েছেন তাঁরা কোন সাহসে এই কাজটা করলেন! মজা বা ঠাট্টারও কিন্তু একটা সীমারেখা আছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত এবং বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের উচিত ওই পড়ুয়াদের অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা। ওই ছাত্র-ছাত্রীদের বিশ্বের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার অধিকার নেই।
# শ্রাবণী সেনঃ অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। ধিক্কার জানাচ্ছি। নিজে গান রচনা করে যা খুশি করুক না, রবি ঠাকুরকে টানাটানির প্রয়োজন নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো কবিকে নিয়ে ছেলেখেলা হচ্ছে! কোন দেশে বাস করছি আমরা! আমার মনে হয়, প্রশাসনের কড়া হাতে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পাশাপাশি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের উচিত ওঁদের সাসপেন্ড করা।
# শ্রীকান্ত আচার্যঃ সোশ্যাল মিডিয়াতে এক ধরনের মানুষ যেন তেন প্রকারেণ দৃষ্টি আকর্ষণ করার খেলায় নেমেছেন। তার জন্য অদ্ভুত কাণ্ড কারখানা করতেও সমস্যা নেই। এই প্রবণতা কিন্তু বিরাট সংখ্যক মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে। পরিচয় গোপন রেখে যা খুশি করে যাওয়ার সুযোগ সোশ্যাল মিডিয়ার সবথেকে বড় গলদ। সেই সুযোগ নিয়ে ওই ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষকে উস্কানি দিচ্ছেন। এর পিছনে লাভ বা ক্ষতি কী আমি জানি না। আমরা হয়তো প্রতিবাদ করব। তখন ওই ব্যক্তি নাম বদলে ফের একই কাজ শুরু করবেন। প্রযুক্তিগতভাবে আমরা এতটাই এগিয়েছি যে তার উপর আমাদেরই আর নিয়ন্ত্রণ নেই। আর কলাভবনের পড়ুয়াদের এই কাণ্ড প্রমাণ করে দিয়ে গেল, গত কয়েক দশকে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাটা সম্পূর্ণভাবে মজে গিয়েছে। শিক্ষা বলতে ডিগ্রি বলছি না, আক্ষরিক অর্থে শিক্ষার কথা বলতে চাইছি। কারণ, একমাত্র শিক্ষাই ঠিক-ভুলের ফারাকটা চেনাতে পারে।
সূত্র ঃ বর্তমান