নয়াদিল্লিঃ সম্পর্ক, বিয়ে, সন্তানের জন্ম দেওয়ার ঝামেলার মধ্যে আসতেই চাইছেন না দক্ষিণ কোরিয়ার (South Korea) মেয়েরা। একা ও আত্মনির্ভর স্বাধীনভাবে বাঁচাকেই তাঁরা প্ৰথম পছন্দের তালিকায় রাখছেন। এরফলে সেদেশে জনসংখ্যাও কমছে দিন দিন। সন্তান নিতে উৎসাহ বাড়াতে তাই কোটি কোটি টাকা খরচ করছে সেদেশের সরকার। সন্তান জন্ম দিলে শিশুর দেখাশোনা, পড়াশোনার জন্য প্রতি মাসে সেই পরিবারকে মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়ার ঘোষণাও করা হয়েছে।
অনেকদিন ধরে ফিনল্যান্ড(Finland), ফ্রান্স(France), দক্ষিণ কোরিয়া (South Korea) এবং ইরান(Iran)এর মতো দেশ জনসংখ্যা বাড়াতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। সন্তান নিতে উৎসাহিত করার জন্য সরকারপক্ষের তরফে নানারকম পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়া(South Korea)র সরকার ঘোষণা করেছে, সন্তানের জন্ম দিলে শিশু ১ বছর বয়স অবধি প্রতি মাসে প্রায় ৫৪০ ডলার করে দেওয়া হবে যা ভারতীয় মুদ্ৰায় ৪৪ হাজার টাকারও বেশি। কোরিয়ান প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইউল বলেছেন, ২০২৪ সালের মধ্যে এই টাকা আরও বাড়িয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে।
কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হল, টাকা দিলেও সন্তান নিতে চাইছেন না দক্ষিণ কোরিয়ার (South Korea) নারীরা। সেখানে সাধারণ মানুষের বক্তব্য, সন্তানের পড়াশোনা ও দেখভালের খরচ অনেক। বেসরকারি স্কুল বা কলেজে পড়াতে হলে যে পরিমাণ খরচ লাগে তা সরকার দেয় না। ফলে খরচ সামলানো সম্ভব হয় না। তাছাড়া সন্তানের মা হলে, চাকরির ক্ষেত্রেও অনেক বাধার মুখোমুখি হতে হয় মেয়েদের। সন্তান হলে মাতৃত্বকালীন বা পিতৃত্বকালীন ছুটি দিতেও চায় না অনেক কোম্পানি। তাই সন্তান মানুষ করা সেদেশে ঝক্কির কাজ।
ইয়ান-ওয়া একজন ওয়েব কমিক আর্টিস্ট। তাঁর বক্তব্য, তাঁদের দেশে মেয়েরা স্বাধীন থাকতেই পছন্দ করছেন। কারণ গর্ভবতী হলে চাকরির ক্ষেত্রে তেমন সুযোগসুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক কোম্পানি দাবি করে, মা হলে সন্তানের দিকেই বেশি মনোযোগ থাকবে, কাজকর্মে ফাঁকি দেবে মেয়েরা। এমনও হয়েছে যে মা হওয়ার খবর শুনেই সেই মেয়ের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে অফিসে যাতে সে চাকরি ছেড়ে দেয়। তাই সবদিক ভেবেই সন্তান নিতে চাইছেন না এই দেশের নারী সমাজ।
চাকরি অবস্থায় কোন নারী গর্ভবতী হলে সে যাতে বৈষম্যের শিকার না হয়, সেজন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় আইন রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটছে না। দক্ষিণ কোরিয়ার মেয়েদের বক্তব্য, সরকার যতদিন সবদিক থেকে সুবিধা না দেবে ততদিন এখানকার মেয়েরা একা ও স্বাধীনভাবে বাঁচতেই বেশি পছন্দ করবে।