কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে দুই রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, নিহত দুই রোহিঙ্গা যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যা মামলার পলাতক আসামি ও ডাকাত দলের সদস্য ছিলেন।
শুক্রবার রাত প্রায় দেড়টার সময়, উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের লেদার জাদিমোরা পাহাড়ের পাদদেশে কথিত গোলাগুলির এই ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরের এ ব্লকের ৩১ নম্বরের বাসিন্দা আব্দুল আজিজের ছেলে মোহম্মদ আব্দুস শুক্কুর (২৫) ও টেকনাফের জাদিমোরা রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা সাব্বির আহমদের ছেলে মোহম্মদ শাহ (৩৮)।
শুক্কুরের বাড়ি মিয়ানমারে আকিয়াব জেলার রাসিদং শহরের শীলখালী এলাকায় এবং শাহর বাড়ি একই জেলার মংডু শহরে।
পুলিশের দাবি, নিহত দুই রোহিঙ্গা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। দু’জনের নামে হত্যা, ডাকাতি সহ চারটি করে মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে দুটি দেশীয় তৈরি অস্ত্র (এলজি), নয়টি তাজা কার্তুজ ও কার্তুজের ১২টি খালি খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় পুলিশের তিন সদস্য উপপরিদর্শক (এসআই) মনসুর আহমেদ, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জামাল হোসেন ও কনস্টেবল লিটন দাস আহত হয়েছেন।
ওসি প্রদীপ কুমার দাস বলেন, জাদিমোরা পাহাড়ের পাদদেশে যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যা মামলার পলাতক আসামিরা অবস্থান করছেন এমন তথ্য পায় পুলিশ।
ওই তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রাত দেড়টার দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রাসেল আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল অভিযানে গেলে আসামিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন।
এ সময় পুলিশের তিন সদস্য আহত হন। আত্মরক্ষায় পুলিশও পাল্টা ৪০টি গুলি ছোড়ে। ডাকাত দলের সদস্যরা পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আব্দুস শুক্কুর, মোহম্মদ শাহ সহ তিন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে দ্রুত টেকনাফ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আহত দুই রোহিঙ্গাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শোভন দাস প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, রাতে পুলিশ পাঁচজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। এর মধ্যে শুক্কুর ও শাহর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। শুক্কুরের দেহে তিনটি ও শাহর দেহে দুটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আহত তিন পুলিশ সদস্যকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সকালে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ওসি প্রদীপ কুমার দাস বলেন, শুক্কুর ও শাহকে রাতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দু’জনকেই মৃত ঘোষণা করেন। মৃতদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হ্নীলা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ ওমর ফারুককে (৩০) জাদিমোরা এলাকায় তাঁর বাড়ির সামনে থেকে রোহিঙ্গা ডাকাত সরদার মোহম্মদ সেলিমের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী টেনেহিঁচড়ে তুলে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে তাঁকে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরের পশ্চিম পাশের পাহাড়ের কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত ফারুকের বাবা মোহম্মদ মোনাফ কোম্পানি বাদী হয়ে শুক্রবার রাত সাড়ে ন’টার দিকে টেকনাফ থানায় ১৭ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।