ঢাকা: ঢাকার তুরাগের রাজাবাড়ী এলাকায় রিকশার গ্যারেজে কেমিক্যাল বিস্ফোরণে দগ্ধ আরো একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ ৮ জনেরই মৃত্যু হলো। গত শুক্রবার রাত ১০টা পঞ্চাশ মিনিটের দিকে শেখ হাসিনার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মো. শাহিন (২৬)। কিন্তু এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা অভিযোগ উঠেছে একটি মহল বিরুদ্ধে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শেখ হাসিনার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. এস এম আইউব হোসেন। তিনি বলেন, উত্তরা তুরাগে রিকশার গ্যারেজে বিস্ফোরণের দগ্ধ শাহিন গতরাতে মারা গেছেন। আমাদের এখানে দগ্ধ হয়ে ৮ জনই এসেছিলেন।
রিকশার গ্যারেজের মালিক গাজী মাজহারুল ইসলামসহ ৮ জন দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন। তবে শাহিনের শরীরের ৫০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
সূত্র জানায়, উত্তরার কামার পাড়ায় নিহত গাজী মাজহারুল ইসলামের অটোরিক্সা গ্যারেজের পাশাপাশি একটি ভাঙারির দোকান রয়েছে। রিক্সা গ্যারেজে অটোরিক্সা রেখে ব্যাটারিতে নিয়মিত চার্জ দেওয়া হয় এবং অটোরিক্সা গুলোতে নিয়মিত ব্যাটারিতে কোন সাবধানতা অবলন্বন না করে এসিড পরিবর্তন করা হয়।
নিহত মাজাহারুলের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শির জানান, উক্ত রিক্সা গ্যারেজে ঘটনার দিন অনেকগুলো ব্যাটারি ওভার লোডিং চার্জ দেওয়া হচ্ছিল। চার্জকৃত ব্যাটারিতে গ্যারেজ মালিক এসিড পরিবর্তন করছিল এসময় অপর দুই কর্মচারী সিগারেট টান ছিলেন। ব্যাটারিতে এসিড ঢালার সময় অসাবধনাতা বশত কিছু এসিড বিদ্যুতের তারে গিয়ে লাগে।
এসময় বিদ্যুতের শটসার্কিট হয়ে বিস্ফোরণে গ্যারেজ মালিক গাজী মাজাহারুলসহ ৮ জন অগ্নিদগ্ন হয়। পর তাদের শেখ হাসিনার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মৃত্যু হয়। বিস্ফোরণের সময় গ্যারেজে থাকা ১৩টি অটোরিক্সা ছিন্নবিছিন্ন হয় এবং রক্ষিত অনন্য মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
পাশের ভাঙ্গারির দোকান ঘরে রক্ষিত বিভিন্ন স্থান হতে ক্রয়কৃত ডঃ রাযেসএর জামকিল স্প্রে কিছু মেয়াদ উত্তীর্ণ ব্যবহারিত খালি কৈাটাসহ অনন্য মালামাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলেও অক্ষত থেকে যায়।
বিস্ফোরণ ঘটার পর উত্তরা ফায়ার ষ্টেশনের ব্যবস্থাপক সৈয়দ মনিরুল ইসলাম তিনটি টিম নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। পরবর্তীতে বিষ্ফেরক বিশেষজ্ঞ টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিক্ষা নিরিক্ষা করে প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত হন ব্যাটারিতে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিটের কারণে ব্যাটারি বিষ্ফেরণে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে বলে জানান।
ড. রায়েসের জামকিল স্প্রে ফোম হ্যান্ডসামিটিজার ভারত থেকে আমদানিকৃত। যাহার একটি গুদাম ঘটনাস্থলের অনুমানিক ৩শ’ গজ অদুরে হওয়ায় ডঃ রায়েসের সাত দিন মেয়াদ জামকিল স্প্রে ফোম হ্যান্ডসামিটিজার কৌটা হতে আগুনের সূত্রপাত বলে ঘটনার ৪/৫দিন পর বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করছে একটি মহল।
এতে করে ব্যবসায়ী ডঃ রায়েসের সুনাম নষ্ট করাসহ অনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টায় লিপ্ত হচ্ছেন কতিপয় স্বার্থন্বেসী মহল।
প্রতক্ষ্যদর্শী ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গ্যারেজে আগুন লেগে ১৩টি আটোরিক্সাসহ সকল মালামাল ছিন্নবিচ্ছিন্ন হলেও পাশ্ববর্তী ভাঙ্গারির দোকানে রক্ষিত ননএলকোহলীক ডঃ রায়েসের জামকিল স্প্রে ফোম হ্যান্ডসামিটিজার কৌটাগুলি অক্ষত রয়েছে।
ড. রায়েসের সাত দিন মেয়াদ জামকিল কিল স্প্রে কৈাটাগুলি ননএলকোহলিক এবং স্প্রে করলে পানিসহ ফোম বের হয় যা দ্বারা আগুন লাগা সম্ভব নয়। ড. রায়েসের সাত দিনের মেয়াদ জামকিল স্প্রে ফোম হ্যান্ডসামিটিজার যদি আগুনের সূত্রপাত হলে তো সেগুলি অক্ষত থাকার কথা নয়।
এঘটনায় অটোরিক্সা গ্যারেজ ও ভাঙারির দোকানের মালিকের ভাই নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে গত বুধবার তুরাগ থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন
উল্লেখ্য, আগস্ট শনিবার দুপুরে তুরাগ থানার রাজাবাড়ী এলাকায় রিকশার গ্যারেজে কেমিক্যাল বিস্ফোরণে ৮ জন দগ্ধ হন। পরে তাদের উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ জনই মৃত্যুবরণ করেছেন।