প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনার আতঙ্কে জেঁকে বসেছে বাংলাদেশে। দেশে প্রতিদিনই রোগী শনাক্ত হলেও সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেই। পরিস্থিতি আরও অবনতি হলে বিভিন্ন এলাকা লকডাউন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
রাজশাহী ও মাদারীপুরে কিছু এলাকায় লকডাউন করা হয়েছে। আগামী দুই এক দিনের মধ্যে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইটও বন্ধ করা হবে। আইন অনুসারে করোনা ভাইরাসকে গেজেটের মাধ্যমে সংক্রামক রোগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে কিনা তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এমতাবস্থায় কঠোর অবস্থানে সরকার। এ সংকট চলাকালীন বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সরকারি দফতরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ছুটি নিতে পারবেন না। দেশের সকল জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) মৌখিকভাবে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানাগেছে।
জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে সরকারি অফিসগুলোকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত রাখতে আপাতত বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তারা যেন নিজ কর্মস্থলের বাইরে না যান সে লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
একাধিক জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে এ সংকট চলাকালীন বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সরকারি দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যক্তিগত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ছুটি নিতে পারবেন না।
চট্টগ্রাম বিভাগের এক ডিসি জানান, ছুটি বাতিল নয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গত বুধবার মৌখিক নির্দেশনা পেয়েছি যে, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া নিজ কর্মস্থলের বাইরে না যান। ইতিমধ্যে বিষয়টি জেলা ও উপজেলায় পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মূলত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জনতাকে জানান, মাঠ প্রশাসনে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতিনিয়ত ছুটি নিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করেন। আবার ঢাকা থেকে অনেকে নিজের এলাকায় যান বিভিন্ন কাজে। এভাবে করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ছে। এ বিষয়টি রুখতেই আপাতত এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, বিদেশ প্রত্যাগত নাগরিকদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এসব কমিটি গঠন করতে হবে। গত বুধবার এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারী করা হয়। এ লক্ষ্যে গঠিত কমিটিকে সহায়তা করার জন্য সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করা হয়।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ সচিবালয় করোনা থেকে মুক্তি পেতে আপাতত সচিবালয়ে দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সচিবালয়ে প্রবেশের কোনও পাস ইস্যু করা হচ্ছে না। সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু করা কার্ড এবং তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে সাংবাদিকদের জন্য ইস্যু করা কার্ড ছাড়া অন্য কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশ সচিবালয়ে কর্মরত অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রাজিব দাস এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, করোনা ভাইরাস ইস্যুতে দর্শনার্থী প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে পিআইডি কার্ড ছাড়া অন্য কাউকে আমরা ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছি না। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে সাংবাদিকরাও যাতে সচিবালয়ে না আসেন এ বিষযটি তাদের অনুরোধ করছি।
সম্প্রতি সচিবালয়ে প্রবেশের আগে দর্শনার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছিলো। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাংবাদিকদেরও তাপমাত্রা মেপে প্রবেশ করানো হচ্ছে। ইতোমধ্যেই সচিবালয়ে দর্শনার্থী কক্ষে সাঁটানো নোটিশে লেখা রয়েছে কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস এর জন্য পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সচিবালয়ের অভ্যন্তরে সাধারণ দর্শনার্থী পাস সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।