বইমেলা হচ্ছে প্রাণের মেলা; মিলন মেলা। বোধকরি বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোন দেশে শুধুমাত্র বইয়ের মেলা নিয়ে এতো আয়োজন, আনন্দ হয় না। এ যে স্বর্গীয় আনন্দ!
তবে বইমেলার আয়োজক যদিও বাংলা আকাদেমি; কিন্তু পুলিশের ভূমিকা থাকছেই। জানাচ্ছেন, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
গত কয়েক বছরের মতো এবারও গ্রন্থমেলায় কোন বই প্রকাশ করা যাবে, আর কোনটি যাবে না, সে বিষয়ে পুলিশের কড়া নজরদারি থাকবে।
২১ জানুয়ারি, মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরে অমর একুশে গ্রন্থমেলার নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে আয়োজিত সমন্বয় সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাংলাদেশের চিরাচরিতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে, এমন কোনপ্রকার বই প্রকাশ করা যাবে না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বইমেলা ঘিরে সমস্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বইমেলা প্রাঙ্গণে থাকবে শিশুচত্বর, মসজিদ, টয়লেট ব্যবস্থাপনা, ফুড পার্ক এবং প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র।
২০২০ সালের বইমেলায় ৫৩৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। আগামি ২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করবেন।
উল্লেখযোগ্য যে, মানবধর্মের চেয়ে বড় ধর্ম আর নেই। কিন্তু এই ধর্ম ভিত্তিতেই বাংলাদেশে সংঘটিত হওয়া বেশ কয়েকটি নৃশংস ঘটনা সারা পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দিয়ে গেছে।
#বাংলাদেশের নারীবাদী, মানবতাবাদী লেখক তসলিমা নাসরিন দেশ থেকে নির্বাসিত আজ ২৫ বছর।
#২০১৫ সালে বইমেলায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে বই প্রকাশ করার অভিযোগে রোদেলা প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করা হয়েছিল।
# একই অভিযোগ দেখিয়ে ২০১৬ সালে বদ্বীপ প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করা হয় এবং গ্রেপ্তার হন কয়েকজন লেখক ও প্রকাশক।
# ২০১৫ সালে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক, ব্লগার অভিজিৎ রায়কে বইমেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসির কাছে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
#২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সাহিত্যিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হিংসাত্মক আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন।
সুতরাং ধর্মীয় গোঁড়ামি বিজ্ঞানমনস্কতার প্রধান বাধা। এই গোঁড়ামি মানুষকে সূর্যের আলো দর্শন করতে দেয় না। চিরদিন পচে মরতে থাকে অন্ধকূপে।
প্রসঙ্গত, সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম৷ অথচ শুরুতে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের কোনো বিধান ছিল না৷ বরং সংবিধানের চার মূলনীতির অন্যতম ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা৷ কিন্তু ১৯৮৮ সালে এরশাদের আমলে সংবিধানের চরিত্র পাল্টে দেয়া হয়৷
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয়, যা কার্যকর হয় একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে৷ সেই সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি মূলনীতি ছিল – ১. জাতীয়তাবাদ, ২. গণতন্ত্র, ৩. সমাজতন্ত্র এবং ৪. ধর্মনিরপেক্ষতা৷ অর্থাৎ সংবিধানের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা৷
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়৷ এরপর ক্ষমতায় আসেন জিয়াউর রহমান৷ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের শুরুতে প্রস্তাবনার আগেই সংযোজন করা হয় ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’।
তারপরই ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের সংবিধানের মূল চরিত্রটিই পাল্টে ফেলেন তৎকালীন স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ৷ তাঁর শাসনামলে সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷ সংবিধানের ঐ অষ্টম সংশোধনীতে বলা হয়, ‘‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাবে৷
তবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের দাবি, কোথাও কোন অনুষ্ঠানে মন খুলে আনন্দ করতে পারেন না তাঁরা, নেই নারী স্বাধীনতা, নে নারী-পুরুষের সমানাধিকার। যার জন্যে ২৬-২৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে লড়াই করছেন তসলিমা নাসরিন।