চলছে করোনা কাল। তীব্র মানসিক চাপে রয়েছেন প্রত্যেক সচেতন নাগরিক। এর মাঝেই বাংলাদেশে ফের ধিক্কারজনক ঘটনাটি ঘটে গেল।
বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিমের একনিষ্ঠ শিষ্য বাউল রণেশ ঠাকুরের উজান ধলের বাড়ির বাউলগানের আসর ঘর পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলেছে মৌলবাদিরা! বাউল রণেশের বাড়িতে থাকা ব্যক্তিগত এবং শীষ্যদের বাদ্যযন্ত্র, গীতিগ্রন্থসহ প্রায় ৪০ বছরের সংগৃহিত বাউল গানের মূল্যবান উপকরণগুলো ভষ্মীভূত করেছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনায় মুষড়ে পড়েছেন শিল্পী।
এ কোন বাংলার রূপ? কোন সংস্কৃতি প্রতিফলিত হচ্ছে সোনার বাংলায়?
সব ধরনের শিল্প-সংস্কৃতি-কৃষ্টির বিরুদ্ধে গিয়ে মৌলবাদীরা ধ্বংস করছে একে একে সব সম্পদ!
রবিবার দিবাগত রাত ১.৩০ মিনিটে কেবা কারা তার ঘরে আগুন ধরিয়ে ঘর জ্বালিয়ে ছাই করে দেয়।
উল্লেখযোগ্য যে, মৌলবাদীরা প্রথম অবস্থায় শাহ আবদুল করিমের বিরুদ্ধে ছিল। সে সময় বাউল রণেশ ঠাকুরের বাবা হাওরাঞ্চলের বিখ্যাত কীর্তনীয়া ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব রবনী মোহন চক্রবর্তী তাঁকে বিভিন্নভাবে মানসিক সহযোগিতা করেছিলেন।
দু-যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রাণের-বাংলার সম্পদগুলো বুকে আগলে ধরে রেখেছিলেন রণেশ বাউল। সেই হৃদয়ের ধন, জনমানসের ধন পুড়িয়ে ছাই করে ফেলেছে দুষ্কৃতিরা। মনের দুঃখে ভস্মীভূত ঘরে বসে রয়েছেন রণেশ বাউল! এই তো বাংলার রূপ! জীবনানন্দের রূপসী বাংলা; রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলা; নজরুলের বাংলাদেশ!
ঘৃণ্য ঘটনার সংবাদ পেয়েই সোমবার বিকেলে দিরাই থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুরো বিষয়টি তদন্ত করছেন বলে জানিয়েছেন দিরাই থানার এসআই জহিরুল ইসলাম।
ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন সুনামগঞ্জের সংস্কৃতিকর্মীরা। দেশ-বিদেশ থাকা রণেশ ঠাকুরের অনুরাগীরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঘটনার। এবং শীঘ্রই দোষীকে খুঁজে বের করার দাবী জানিয়েছেন।
প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন।
Baul Ranesh Thakur's music room which was used to teach people baul songs has been demolished by Islamists in Sunamganj, Bangladesh. Islamists are against all kinds of art including music. pic.twitter.com/TO9zDIASYr
— taslima nasreen (@taslimanasreen) May 20, 2020
আমার চাইর দশকের বাইদ্য-যন্ত্র, গানের খাতা, নথিপত্রপুড়াইয়া করেছে ছাই! মনের দুঃখ কার কাছে জানাই?— রণেশ বাউল
Posted by সাম্য রাইয়ান on Tuesday, May 19, 2020
আমার চাইর দশকের বাইদ্য-যন্ত্র, গানের খাতা, নথিপত্র
পুড়াইয়া করেছে ছাই! মনের দুঃখ কার কাছে জানাই?
— রণেশ বাউল।
মনের শোক পাগলপ্রায় করে দিচ্ছে বাউলকে। হৃদয় ছিঁড়ে যাওয়া একখানা গান।
এ শুধু রণেশ বাউলের বসত বাড়িতে আগুন লাগানো নয়। এ দৃশ্য বাঙালির পুড়ে যাওয়া সংস্কৃতির দাগ! সংস্কৃতিকে আর বাঁচতে না দেয়ার দাগ!
বাংলাদেশে বাউল গান, কৃষ্টির ওপর আঘাত হানা এটিই প্রথম নয়!
সম্প্রতি কয়েকমাস আগেও টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এক অনুষ্ঠানে গানের পূর্বে দেয়া এক বক্তব্যে শরিয়ত সরকার বয়াতী ইসলামের নবী এবং ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করেছেন – এমন ভয়ংকর অভিযোগ তুলে এলাকায় বিক্ষোভ হয় এবং স্থানীয় এক ব্যক্তি তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
সেই মামলার জের ধরেই মি. সরকারকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছিল পুলিশ।
বাঁক স্বাধীনতা নেই, শিল্পীর স্বাধীনতা নেই! দেশে ভস্মের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক একজন শিল্পী!
রণেশ ঠাকুরের ওপর আক্রমণ করে ফের লোক সংগীতের বিকাশ এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আবারও বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলো।
বাউল রণেশ ঠাকুরের ওপর হওয়া আক্রমণের ঘটনা প্রবল সাড়া ফেলে দিয়েছে চারদিকে। এই সংবাদটি প্রচারের পরেই বাউল রণেশ ঠাকুরের জন্য একটি নতুন ঘর বানিয়ে দেয়ার ঘোষণা করেছেন, নিউইয়র্ক অভিবাসী বাংলাদেশী আমেরিকান, সুনামগঞ্জের আরেক সাহসী কৃতিসন্তান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নির্ভীক সৈনিক, ২০০২-২০০৩ সালের সাস্টিয়ান (শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র) জনাব সাদিকুর রহমান সুফিয়ান।
সংবাদটি বাউল নিজেই তাঁর ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছেন!