বাংলাদেশি হিন্দু বিপ্লব চন্দ্র শুভর পক্ষে কলম তুলে নিয়েছেন মানবতাবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ লেখক তসলিমা নাসরিন। আহ্বান জানিয়েছেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষাকারিদের। তাঁরা যেন আওয়াজ দেন ভুক্তভোগী বিপ্লবের পক্ষে। জোরে দিতে ভয় পেলেও অন্তত যেন ফিসফিস করে হলেও। কারণ দেশে আস্তিক, নাস্তিকসহ সকল ধর্মের মানুষকে সমান চোখে দেখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
যুবক বিপ্লবের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে গালাগাল ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মো. ইমন (১৮) ও রাফসান ইসলাম শরীফ ওরফে শাকিল (১৮) কে। পাশাপাশি গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে হ্যাকড ফেসবুক আইডির মালিক বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য শুভকেও (২৫)! তসলিমা প্রশ্ন তুলেছেন, দুই হ্যাকারকে জেলে ঢুকানো হয়েছে তাঁদের দোষের জন্যে। কিন্তু সাথে বিপ্লবকেও কেন? তাঁর দোষ কী? সে মুসলমান নয়, এটাই তাঁর দোষ?
ফেসবুক মেসেঞ্জারে ইসলাম ধর্ম ও মহানবীকে নিয়ে কটূক্তি এবং ডিজিটাল মাধ্যমে ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে।
লেখক তসলিমা দেশের ‘সেকুলার’ দের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছেন, তাঁরা যেন “বিপ্লবের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ স্লোগান দিতে না পারেন বিপ্লবকে যেন অপরাধী হিসেবে ট্রিট না করা হয়, তাকে যেন নিরাপত্তা দেওয়া হয়, যেন ধর্মান্ধ শেয়াল শকুন তাকে কামড়ে না খায় তা বলুন।”
“খবরে দেখলাম ভোলায় বিপ্লব চন্দ্রের আইডি হ্যাক করে ওই আইডি থেকে শরিফ আর ইমন নামে যে দুজন ইসলামি বিপ্লবী নিজেদের পেয়ারা নবীকে ‘তর মায়েরে…’ জাতীয় খাপশা গালি দিয়েছে, যেন হিন্দু-বিপ্লব মুসলমানদের চাপাতির কোপ খেয়ে মরে, তাদের জেলে নেওয়া হয়েছে তাদের কুকর্মের জন্য, কিন্তু বিপ্লবকে কেন একই সংগে জেলে নেওয়া হয়েছে? বিপ্লবের দোষটা কী? সে মুসলমান নয়, এই তার দোষ? তার আইডি কেন হ্যাক হলো, অন্য কারও আইডি তো হ্যাক হয় না, এই দোষ? যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দাবি করেন, তা*রা কোথায় আজ? ‘বিপ্লবের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ স্লোগান দিতে না পারেন বিপ্লবকে যেন অপরাধী হিসেবে ট্রিট না করা হয়, তাকে যেন নিরাপত্তা দেওয়া হয়, যেন ধর্মান্ধ শেয়াল শকুন তাকে কামড়ে না খায় তা বলুন। জোর গলায় বলতে বাধে তো মিনমিন করে হলেও বলুন। রাষ্ট্রের কাজ হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান আস্তিক নাস্তিক সবাইকে সমান চোখে দেখা। তাই না? তৌহিদি জনতা কেন দুই ইসলামি বিপ্লবী শরিফ আর ইমন যারা নবীকে ‘তর মায়েরে…’ লিখলো, তাদের ফাঁসি চাইছে না?”
রবিবার বোরহানউদ্দিন থানার উপ-পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন তাদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলাটি করেন।
প্রসঙ্গত, ফেসবুক অ্যাকাউন্টটির প্ৰকৃত মালিক বিপ্লব গত ১৮ অক্টোবর তারিখে সন্ধ্যা ৮ টার সময় নিজের অ্যাকাউন্টটি হ্যাকড হয়েছে জানিয়ে জিডি করেন ভোলার বুরহাদ্দিন থানায়।
এদিকে বিপ্লবের বহু ফেসবুক বন্ধুকে অ্যাকাউন্টের হ্যাকাররা বিপ্লবের অ্যাকাউন্টটি হ্যাক করা হয়েছে বলে মেসেঞ্জারে মেসেজ করতে থাকে। এবং যদি যুবক বিপ্লবের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি খুলতে হয় তাহলে বিপ্লবকে ৫০০ টাকা দেওয়ার জন্যে হ্যাকাররা বিপ্লবের বন্ধুদের মেসেজও দিতে থাকে।
রবিবার, বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামক যুবকের বিচারের দাবিতে ঈদগাহ মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে তৌহিদী জনতা। এ সমাবেশের জন্য পুলিশ অনুমতি দেওয়ার আগেই তারা মাইকিং করতে থাকে। একপর্যায়ে উন্মাদ জনতা পুলিশকে আক্রমণ শুরু করে।
পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছুড়লে ৪ জন নিহত হন। আহত ১০ পুলিশ সদস্যসহ দেড় শতাধিক লোক। এই ঘটনার সমবেদনা প্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ জানিয়েছিল, “ফেসবুক আইডি হ্যাকের প্রেক্ষিতে বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য (২৫) নামে এক যুবক গত শুক্রবার রাতে বোরহান উদ্দিন থানায় জিডি করেন। জিডির সময় থানায় অবস্থানকালেই বিপ্লবের নম্বরে আসা কলে চাঁদা দাবি করা হয়। প্রযুক্তির সাহায্যে সেদিন রাতেই বিপ্লবের ফেসবুক হ্যাককারী ও তার মোবাইলে কলকারী শরীফ এবং ইমন নামে দুই মুসলিম যুবককে যথাক্রমে পটুয়াখালী ও বোরহানউদ্দিন থেকে আটক করা হয়।”
পুলিশের এই ভাষ্যের সঙ্গে মেলা কথোপকথনের কিছু স্ক্রিনশট পাওয়া গেছে। যেখানে ৫০০ টাকার কথা উল্লেখ রয়েছে। এই স্ক্রিনশটটি বিপ্লবের কিছু মুসলমান বন্ধু সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করেছে।
অন্যদিকে, ২১ অক্টোবর সোমবার, ভোলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই ঘটনার তদন্তের জন্য সরকারের কাছে ছয় দফা দাবি পেশ করেছেন ‘সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদ’ এর যুগ্ম সদস্য সচিব মিজানুর রহমান।
তাঁদের ছয় দফা দাবিগুলোর মধ্যে বিপ্লবের ফাঁসি চাওয়াসহ ছিলঃ
# জেলা ও থানা থেকে এসপি এবং ওসিদের প্রত্যাহার করতে হবে
# ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করার অনুমতি দিতে হবে
# আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে
# নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য প্রদান করতে হবে
# অভিযুক্ত বিপ্লব চন্দ্র শুভর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের ফাঁসির দাবি এবং
# গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে হবে
বলা বাহুল্য, তাঁদের দাবি প্রশাসন মেনে নিয়েছে। প্রশাসনের কেবল বক্তব্য ছিল, ফাঁসি নয়, অপরাধী যেই হোক না কেন, প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে।
“তৌহিদি জনতা কেন দুই ইসলামি বিপ্লবী শরিফ আর ইমন যারা নবীকে ‘তর মায়েরে…’ লিখলো, তাদের ফাঁসি চাইছে না?”
তসলিমা নাসরিন তীব্র প্রতিবাদ করেছেন বিপ্লবের প্রতি হওয়া এমন অমানবিকতাকে।