
আমার গর্ব আমি বাঙালি, আমার গর্ব আমি বাংলা ভাষায় কথা বলি। এই ভাষার হাত ধরে কত বাধা, চড়াই উৎরাই পার করে এসেছি আমরা।
শুধুমাত্র নিজের ভাষাকে বাঁচানোর জন্যে নিজের সংস্কৃতিকে বাঁচানোর জন্যে যে মানুষ প্রাণ দিতে পারে এমন নজির কি এই বিশ্ব ১৯৫২ সালের দেখেছিল?
বাংলা মানে শুধু বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গ নয়, বাংলা গোটা পৃথিবী। বাংলা প্রাণ। অথচ এই ভাষাতেই এখন কত মানুষ কথা বলতে লজ্জা বোধ করেন! ছেলে মেয়েদের ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে ভর্তি করিয়ে গর্বের সাথে বলেন, আমার সন্তান বাংলা বলতে জানে না। শুনলে অবাক হই। শুনলে প্রতিবাদ করি।
আজ আপনাদের নিয়ে যাবো আফ্রিকার সিয়েরা লিওনে। সেখানে সরকারি ভাষার মর্যাদা পেয়েছে বাংলা! শুনে অবাক হচ্ছেন? এটিই সত্য।
বাংলা ভাষার মাহাত্ম্য ছড়িয়ে আছে গোটা পৃথিবীজুড়ে। অথচ আমরাই বুঝলাম না। এই প্রজন্মকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। নিজের মাতৃভাষা না জানার মধ্যে কোত্থেকে অহংকার আসে?
মাতৃভাষার জন্য আমাদের রক্তদান এবং এ বিশ্বজুড়ে এ ভাষার মর্যাদা ছড়িয়ে পড়ার গল্প উঠে এসেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে।
২১ ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' ঘোষণা করে জাতিসংঘ। এর মাধ্যমে
শুধু বাংলাই বিশ্বজয় করেনি, এর মধ্য দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষির মানুষরা তাঁদের মায়ের ভাষাকে সম্মান জানানোর সুযোগ পেলেন। বাংলা ভাষার মাহাত্ম্য চর্চিত হলো বিশ্বজুড়ে।
আমরা হয়তো খবরও রাখি না যে ঠিক অর্ধ শতাব্দি পর আবার বাংলা ভাষাভাষিদের আনন্দ উদযাপনের উপলক্ষ সৃষ্টি হলো।
এবার বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরের এক দেশে বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসাবে ঘোষণা করা হলো।
২০০২ সালে পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ সিয়েরা লিওনে অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার নাম ঘোষণা করা হয়।
সিয়েরা লিওনের সঙ্গে বাংলাদেশের ভৌগলিক বা সাংস্কৃতির মিল নেই। সম্পূর্ণ ভিন্ন সিয়েরা লিওন।
কিন্তু এ দুই দেশের সম্পর্ক আত্মায় আত্মায়। শুধু এই দুই দেশ নয়। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে বসবাস করা বাঙালিরা মর্মে মর্মে অনুভব করেন লিওনের কথা।
বাংলা ভাষাকে নিজেদের করে নিয়েছে আফ্রিকার দেশটি। ১৯৯১-২০০২ সাল পর্যন্ত দেশটি গৃহযুদ্ধে অভিশাপে
মারাত্মকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। ভয়ংকর একটা সময়ই বটে।
সে সময় সিয়েরা লিওনে শান্তি ফেরানোর জন্যে বিপুল পরিমাণ শান্তি বাহিনী নিয়োগ করে জাতিসংঘ। এবং বলা বাহুল্য সেখানে বড় অংশজুড়ে ছিল বাংলাদেশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
বাংলাদেশিদের কাছে সিয়েরা লিওনের সরকার কৃতজ্ঞ।
সেই দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফেরে ২০০২ এর আগে পরে।
এবং উল্লেখযোগ্য যে, প্রেসিডেন্ট আহমাদ তেজান কাব্বাহ কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্যে, বাংলাদেশি সেনা সদস্যদের ভূমিকাকে চিরস্মারণীয় করে রাখার জন্যে বাংলা ভাষাকে দেশের সরকারি ভাষার মর্যাদা দান করলেন। এ স্বীকৃতি গোটা বিশ্বের বাঙালির। বাংলার গর্বের।
২০০২ সালেরই ১২ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট আহমেদ তেজান কাব্বা ঘোষণা করেন। এবং সে দিন থেকেই সিয়েরা লিওনের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে স্থান পায় গৌরবের বাংলা।
সিয়েরা লিওনের মানুষরা নাচে বাংলা গানে। আনন্দ আকাশে বাতাসে। বাংলা ভাষা, বাংলার মানুষেরা তাঁদের আশা দেখিয়েছে।
সিয়েরা লিওন আমাদের সহোদর ভাই। বাঙালির ভাই।