ঢাকা: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতীয় হাইকমিশনার। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যৌথভাবে উদ্বোধন করা ভারতের সহায়তাপুষ্ট তিনটি উন্নয়ন প্রকল্প উপ-অঞ্চলের জনগণের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ের জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং আমি গত ১ নভেম্বর যৌথভাবে তিনটি উন্নয়ন প্রকল্প চালু করেছি। আমি আশা করি, এই প্রকল্পগুলো উভয় দেশ এবং উপ-অঞ্চলের জনগণের উপকার করবে।’তিনটি প্রকল্প হলো: ১২.২৪ কিলোমিটার আখাউরা-আগরতলা আন্তঃসীমান্ত রেল সংযোগ, খুলনা-মংলা বন্দর রেল লাইন; এবং মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টের ইউনিট -২।
বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এসব তথ্য জানান। ২০২৪ থেকে পাঁচ বছরের মেয়াদে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন আঞ্চলিক পরিচালক হিসাবে সায়মা ওয়াজেদের প্রার্থিতাকে সমর্থন করার জন্যও প্রধানমন্ত্রী ভারত সরকার এবং নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান।
গত ১ নভেম্বর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল নেপালের একমাত্র প্রার্থীকে পরাজিত করে জয়ী হন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই দেশেই সাধারণ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। উভয় দেশেরই একে অপরের সংবেদনশীলতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত।
বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার অবস্থা নিয়ে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন। বৈঠকে অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনে দিল্লির মাথা ব্যথা নেই। কেননা বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-ইইউসহ বিভিন্ন বিভিন্ন বক্তব্য রাখছে।
তবে দিল্লি বরাবরই বলে আসছে এটা বাংলাদেশের মানুষের নিজস্ব ব্যাপার। জনগণ যা চাইবে, সরকারও তাই করবে। সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারত প্রকাশ্যে এই বিষয়ে কিছু বলেনি এবং ধারণা করা হচ্ছে তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটির প্রতি সমর্থন থাকবে দিল্লির।
বাংলাদেশ জানুয়ারির প্রথমার্ধে যখন আরেকটি বিক্ষোভপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। রাজপথে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর লড়াই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনে ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগ ৯০ দিন আগে পদত্যাগ না করায় তা বর্জন করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও রাজপথে সহিংসতার জন্য ব্যাপক সমালোচনায় পড়েছিল দলটি।
২০১৯ সালে একই পথ গ্রহণ করে বিএনপি। এবার বিএনপি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে তাদের সমর্থকরা যেন সহিংস না হয়ে ওঠে। কিন্তু ২৮ অক্টোবর সহিংসতায় এক পুলিশ সদস্য ও বিএনপি নেতা নিহত হয়েছেন। বিএনপি চেষ্টা করছে আবারও যেন তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল এবং ভারতে প্রবাসী আওয়ামি লিগ সরকারের প্রতি কখনোই উষ্ণতা দেখায়নি। এখন দেশটিতে চিনের উপস্থিতি ছড়িয়ে পড়ায় যুক্তরাষ্ট্র, বিরোধী দল বিএনপিকে সমর্থন দিতে চায়। মজার বিষয় হলো, চিনের সঙ্গে বিএনপিরও দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে।
২০১৪ সালে বিএনপি ও তাদের জোট মিত্র জামাতে ইসলামি ওই সময় রাজপথে নজিরবিহীন সহিংসতার জন্ম দিয়েছিল। এবারও বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কৌশল সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের অংশ হতে পারে বলে।সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ থাকলেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ বিরোধীদের দাবি মানবে না। তিনি আত্মবিশ্বাসী যে, ১৫ বছরের শাসনামলের ইতিবাচক রেকর্ড তাকে আবার ক্ষমতায় নিয়ে আসবে।