ঢাকা: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকলে একটি দেশ যে এগিয়ে যেতে পারে তা আজ প্রমাণিত।
এ সময় দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে বিএনপির অনশন কর্মসূচির সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অনশনের নামে বিএনপি নাটক করছে।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর কাওলার সিভিল এভিয়েশন মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষ্যে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে একথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকলে একটা দেশের যে উন্নতি হয়, যারা গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে তারা ক্ষমতায় থাকলে যে দেশের উন্নতি হয়, আজ আমরা সেটা প্রমাণ করেছি।
তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া কখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে না। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া পাকিস্তানের ধারাবাহিকতা নিয়ে চলতে চেয়েছিল। জাতির পিতার হত্যাকারীকে ভোট চুরি করে পার্লামেন্টে বসিয়েছিল।
আর আল বদর, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, যারা এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে, মা বোনকে ধরে নিয়ে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে দিয়েছে, তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। জিয়া বসিয়েছিল, এরশাদও, খালেদা জিয়াও। কাজেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে এদের কোনো অবদান নেই।
তারা সেটা করতেও চায় না। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় মানুষের কথা ভাবে। দেশের মানুষের উন্নতি চায়; আর সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছে।
রিজার্ভের টাকা জনগণের সেবায় খরচ করেছি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের সেবায় রিজার্ভের টাকা খরচ করেছি। ভ্যাকসিন কিনছি। খাদ্য মন্দায় খাদ্য কিনেছি, এখনো কিনছি। তিনি বলেন, আমাদের সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ দারিদ্রের হার ১৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।
করোনায় ধনী দেশ টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন দিয়েছে, আমরা দিয়েছি বিনামূল্যে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে যখন যেটা প্রয়োজন হয়েছে, করেছি। তিনি বলেন, বিএনপির আমলে দেশ ছিল পিছিয়ে। আওয়ামী লীগের আমলে এগিয়ে গেছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে।
খালেদা জিয়া আমলে ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল। আর আমরা এবার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশের আদর্শ ও চেতনায় বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ সেটা ধারণ করে এবং জনগণের সেবা করে যাচ্ছে। আপনাদের এলাকাকে সিটি করপোরেশনের আওতায় এনেছি।
কাজ করে যাচ্ছি। আজকে দেশের মানুষ ভূমি ও গৃহ পাচ্ছে। আমরা বলেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর দেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। বস্তিবাসীদেরও ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট দিচ্ছি। তারা সুন্দরভাবে বাঁচবে। খালি বড়লোকরা ফ্ল্যাটে থাকবে, গরিবরা থাকবে না, এটা হতে পারে না। তিনি বলেন, বিএনপির আমলের জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের ফলে সব মানুষ অতিষ্ঠ ছিল।
তাদের আন্দোলনে হাজার হাজার গাছ কেটেছে, রাস্তা কেটেছে। তারা ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে জানে না। খুনিদের দল জনগণের কল্যাণ কখনো করতে পারে না। করেও না। একই দিনে ৬৪ জেলায় ৫০০ বোমা হামলা করলো। স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রের ঝনঝনানিতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেছে। নিজেরই তো শিক্ষা নেই, অন্যকে শিক্ষা দেবে কীভাবে?
এসএসসিতে ফেল করেছে। পাস করেছে অংকে। কারণ টাকা-পয়সা হিসাব-নিকাশ ভালো জানতো।
অনশনের নামে নাটক করছে বিএনপি: দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে বিএনপির অনশন কর্মসূচির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনশনের নামে বিএনপি নাটক করছে।
তিনি বলেন, আমার একটা প্রশ্ন, বিএনপি নেতাদের কাছে। আপনারা অনশন করেন। অথচ কেমন ছেলে সে (তারেক রহমান) অসুস্থ মাকে দেখতে আসে না। মা নাকি মরে মরে। আমি তো বলব, মাকে দেখতে আসুক। অনশনের আগে কী দিয়ে নাস্তা করে এসেছে? শেষে কী দিয়ে ভাত খাবে? নাটকের একটা সীমা থাকে। কয় ঘণ্টার অনশন। খালেদা জিয়ার আমলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল দাবি করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে খালেদা জিয়া শিক্ষাঙ্গনে অস্ত্রের ঝনঝনানি তৈরি করেছিলেন। তিনি (খালেদা জিয়া) নিজে পড়াশোনা করতে পারেনি বলে অন্যরা পড়াশোনা করুক সেটাও চায় না। তিনি আরও বলেন, সে (বেগম জিয়া) একবার ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিল। দুইটা বিষয়ে পাস করেছিল। উর্দু আর অংক।
সারাদিন পেয়ারে পাকিস্তান বলে জপ করে। সেই জন্য উর্দুতে পাস করেছিল। আর টাকা পয়সার হিসাব করতে হয়, তাই অংকে পাস করেছিল।
বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান: সমাবেশে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সরকার ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে। এক্ষেত্রে অনেক বেশি খরচ করতে হয়। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে।
একইভাবে জল উৎপাদনেও সরকার ভর্তুকি দিয়েছে। পানি ব্যবহারেও সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। তিনি বলেন, আমি গ্রামে গেলাম, সেখানে দেখি সকলের হাতে মোবাইল ফোন। সবাই ছবি তুলছে। অথচ বিএনপির আমলে কম্পিউটার ছিল না। সরকার ‘লার্নিং এন্ড আর্নিং’ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।
আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় না থাকে, অন্য কেউ যদি ক্ষমতায় আসে সব ধ্বংস করে দেবে।কেমন ছেলে সে অসুস্থ মাকে দেখতে আসে না: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার একটা প্রশ্ন, বিএনপি নেতাদের কাছে।
আপনারা অনশন করেন, কেমন ছেলে সে (তারেক রহমান) অসুস্থ মাকে (খালেদা জিয়া) দেখতে আসে না। মা নাকি মরে মরে। আমি তো বলব, মাকে দেখতে আসুক। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার এক ছেলে কোকো মারা যায়। আমি একজন মা। আমারও সন্তান আছে। আমি খালেদা জিয়াকে সহানুভূতি দেখাতে গিয়েছিলাম। আমি যখন সেই বাসার সামনে যাই, বাসার গেট তালা দিয়ে বন্ধ করে দেয়। কত বড় অপমান, চিন্তা করে দেখেন।
খালেদা জিয়া ভুলে গেছেন, স্বাধীনতার পর কতবার ওই ৩২ নম্বরে গেছে। আমার বাবা আর মা যদি সহযোগিতা না করতো তাহলে নিজেকে বেগম জিয়া বলে পরিচয় দিতে পারত না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বোন আমার কাছে এসে কান্নাকাটি করল। আমি সাজা স্থগিত করলাম।
এখন নাকি তারা খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য অনশন করছে। অনশনের আগে কি দিয়ে নাস্তা করে এসেছে? শেষে কি দিয়ে ভাত খাবে? নাটকের একটা সীমা থাকে। কয় ঘণ্টার অনশন? তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছি।
বলেছিল, আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আল্লাহর মাইর, দুনিয়ার বাইর। এখন সে না প্রধানমন্ত্রী, না বিরোধী দলে। শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হয়রানি করেছে। খালেদা জিয়া বলেছিল, গোপালগঞ্জের নাম মুছে ফেলবে। জয় বাংলা স্লোগান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইতিহাস মুছতে চাইলেই মুছে ফেলা যায় না।
আমি শেখ মুজিবের মেয়ে, ক্ষমতার লোভ করি না: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিলেও ক্ষমতায় যেতে পারিনি। সে নির্বাচনে খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছিল। আমাকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তখন আমি বলেছিলাম, আমি শেখ মুজিবের মেয়ে।
ক্ষমতার লোভ করি না, জনগণের স্বপ্ন বেচি না। খালেদা জিয়া পাকিস্তানের ধারাবাহিকতা নিয়ে চলতে চেয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার হত্যাকারীকে ভোট চুরি করে পার্লামেন্টে বসিয়েছিল। আর আল-বদর, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, যারা এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে, মা-বোনকে ধরে নিয়ে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে দিয়েছে, তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছিল। জিয়াও বসিয়েছিল, এরশাদও, খালেদা জিয়াও।
কাজেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে এদের কোনো অবদান নেই। তিনি বলেন, ৭৫ এর পর ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল– জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ খালেদা জিয়া থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, এই ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা দেশের জন্য কি করেছে? মানুষের জন্য কি করেছে?
মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কি করেছে? সেটা একবার চিন্তা করে দেখবেন। অনেকে বড় বড় কথা বলেছে, দেশের মানুষের জন্য তারা কি করেছে? তিনি বলেন, ৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, বিদ্যুৎ ছিল মাত্র ১৬০০ মেগাওয়াট। এই বিদ্যুতের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে সে কানসাটে মানুষকে গুলিকে হত্যা করে। ঢাকা শহরে পানির অভাব, বিদ্যুতের অভাব ছিল।
মানুষ বিদ্যুৎ ও জলের জন্য আন্দোলন করেছিল। বিএনপির এক নেতাকে পাবলিক ধাওয়া দিয়েছিল, নামই হয়ে গিয়েছিল দৌড় সালাউদ্দিন। পাবলিকের ধাওয়া খেয়ে সে পালিয়েছিল। খালেদা জিয়া চাহিদা পূরণ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকলে একটা দেশের যে উন্নতি হয়, যারা গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে তারা ক্ষমতা থাকলে যে দেশের জন্য উন্নতি হয়, আজ আমরা সেটা প্রমাণ করেছি।
সব রেলগেটে ওভারপাস করার ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর: রাজধানীর সব রেলগেটে ওভারপাস করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যেখানে যেখানে রেলগেট সেখানে ওভারপাস করে দেব, যাতে মানুষকে যানজটে কষ্ট করতে না হয়।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচির সঞ্চালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীগের সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শাহজাহান খান; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের নেতা ও কর্মীরা।