ঢাকা: বাংলাদেশে ঢাকার অভিজাতপল্লি গুলশানের ‘হোলিআর্টিজান ক্যাফে’র মতোই ঢাকার নজড়কাড়া স্থানে বড়সড় হামলার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছিল বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘ইসলাম আল আনসার।’
এজন্য আনসারের কয়েকজন চৌকস জঙ্গি ঢাকায় একত্রিত হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ভেস্তে যায় তাদের সে পরিকল্পনা। উপরন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে গ্রেপ্তার হয়ে এখন এদের ঠাঁই হয়েছে শ্রীঘরে।
হোলিআর্টিজান হামলায় দেশি-বিদেশি ২০ জন নিহত হয়েছিলেন। মারাও গিয়েছিল জঙ্গিরা। এবার জঙ্গি সংগঠনটির নায়েবে আমির ইহছানূর রহমান ওরফে মুরাদ ওরফে সাইফকে তার পাঁচ জন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ২টি বিদেশি পিস্তল ও ১৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
সূত্র জানিয়েছে, অত্যন্ত গোপনীয়তায় মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে জঙ্গিরা তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করত। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা থেকে সংগঠনটির পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের নাশকতার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হল- ইহছানূর রহমান ওরফে মুরাদ ওরফে সাইফ (২৬), সাখাওয়াতুল কবির ওরফে আনিস ওরফে রফিক (৪৫), বখতিয়ার রহমান ওরফে নাজমুল (৩০), ইউসুফ আলী সরকার (৩১), জাহেদুল ইসলাম ওরফে আশ্রাফ (৩৫)।
তাদের গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে দুটি পিস্তল ও ১৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আজ রবিবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)-এর প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা তাদের ঢাকায় আস্তানাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা কৌশলে প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যায়। তারা ও পলাতক আসামিরা অবৈধভাবে অস্ত্র-গুলি নিজ দখলে রেখে, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সংঘটনের ষড়যন্ত্র করে, মোবাইলের মাধ্যমে গোপনীয় অ্যাপস ব্যবহার করে সংগঠনের তথ্য আদান-প্রদান করে আসছিল।
তিনি আরো জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদেরকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের জন্য ১০ দিনের আবেদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই সংগঠনটির আমিরকে ধরা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।
আমরা সেটি করতে পেরেছি। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে আনসার আল ইসলামের বেশ কিছু আস্তানা রয়েছে ঢাকা জেলায়। তার মধ্যে সাভার এলাকার দায়িত্বে ছিল আশরাফ। এই আশরাফ ঢাকা কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞানে পড়ালেখা করেছে। তার দায়িত্ব ছিল সাভার সেলটা দেখা। আশরাফ ২০১৫ সাল থেকে আনসার আল ইসলামে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের যোগদান করে।
এদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা কুড়িগ্রাম থেকে উগ্র ধর্মান্ধদল জামাতে ইসলামির ১৯ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার সদর ও উলিপুর থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে সদরের যতিনেরহাট এলাকা থেকে মিছিল শুরুর প্রাক্কালে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদুর রহমান ও উলিপুর থানার ওসি গোলাম মর্তুজা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মাদক কারবারের অভিযোগে ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন অপরাধ ও গোয়েন্দা বিভাগ। রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এদের হেফাজত থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন জব্দ করা হয়েছে।